ফুল পবিত্রতার প্রতীক, ঘরের শোভাবর্ধন এবং বাণিজ্যিক দিক বিবেচনায় ফুলের ব্যবহার বেশ পরিচিত। তবে রোজেল ফুল পরিচিত তার পুষ্টিগুণে। এই ফুলের লালচে রঙের বৃতির প্রতি গ্রাম শুকনা অংশে রয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৬০ থেকে ১ দশমিক ৮৬ গ্রাম অ্যান্থোসায়ানিন (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট)। এ ছাড়া এতে রয়েছে ফ্ল্যাভনয়েড, ক্যারোটিন, প্রোটিন, চর্বি, ফাইবার ও প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান। রোজেল বৃতির প্রতি লিটারে ৩ থেকে ৪ গ্রাম অর্গানিক এসিড পাওয়া যায়। এগুলো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, জ্বর প্রতিরোধসহ বিভিন্ন অসুস্থতার উপশমে কার্যকর।
এছাড়া পরিপক্ব বীজেও প্রায় ২০ শতাংশ আমিষ ও ২০ শতাংশ চর্বি রয়েছে । যা প্রক্রিয়াজাত করে পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
রোজেল ফুল নিয়ে গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির। তার এ গবেষণায় সহযোগী ছিলেন একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী স্বাগত ইসলাম স্বর্ণা ও আফিয়া মারিয়াম।

শুধু বৃতি নয়, রোজেল পাতাতেও রয়েছে নানা ঔষধিগুণ। ফুলের বৃতি ব্যবহার করে তৈরি করা যায় মুখোরোচক জ্যাম, জেলি, চা, আচার, চাটনি ও বিভিন্ন পানীয়। গবেষকদের দাবি, এটি চা ও কফির বিকল্প হতে পারে। কারণ চা ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন দেহের জন্য ক্ষতিকর হলেও রোজেলের রসে রয়েছে ক্যাফেইনের পরিবর্তে ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আন্তর্জাতিক বাজার
আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে রোজেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
গবেষক অধ্যাপক ছোলায়মান আলী বলেন, অন্যান্য ফল ও সবজিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকলেও তা সাধারণত অন্য মৌলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কিন্তু রোজেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অধিক পরিমাণে মুক্ত অবস্থায় থাকে, ফলে শরীর তা সহজেই শোষণ করতে পারে। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে রান্না ও সবজিতে রোজেলের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। পার্বত্য জেলায় এটি ‘অ্যামলিয়া শাক’ নামে বাজারে পাওয়া যায়।
চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাধারণত রোজেল গাছ গ্রীষ্ম ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ভালো জন্মায়। আমাদের দেশে বাড়ির পতিত জমি বা ফসলের আইলে সহজেই এর চাষ করা যায়। বীজ বপনের প্রায় ২২০ দিন পর প্রতিটি গাছে গড়ে ১৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম বৃতির ফলন পাওয়া যায়। হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৩ থেকে ৭ টন পর্যন্ত হতে পারে। বৃতির উজ্জ্বল লাল রং খাদ্যে প্রাকৃতিক রং হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এর কান্ড ও শাখা থেকে পাটজাতীয় আঁশ উৎপাদনের সম্ভাবনাও রয়েছে।’
অধ্যাপক ড মো ছোলায়মান আলী ফকির আরও বলেন, বাড়ির পাশে মাত্র চারটি রোজেল গাছ থাকলেই একটি পরিবারের সারা বছরের চা, জ্যাম, জুস বা আচার তৈরির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।


