সবাই স্বপ্ন দেখে বড় কিছু করার। চাইলেই তো সে স্বপ্নের পূর্ণতা দেওয়া যায় না। তবে ভারতের দিল্লির দুই বন্ধু চক্রধর গেদে ও নীতিন কৌশল। মাত্র ৫০টি গরু দিয়ে ব্যবসা শুরু করে এখন তাদের কোম্পানি কান্ট্রি ডিলাইটের সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩২০ কোটি রুপিতে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকারও বেশি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইট্টিনের খবরে বলা হয়, ৫০টি গরু দিয়ে দুই বন্ধু চক্রধর ও নীতিন তাদের ব্যবসা শুরু করেন ২০১১ সালে। তখন দিল্লিতে প্রতিদিন ৭০ লাখ লিটার দুধ ব্যবহার করা হতো, তাদের স্বপ্ন ছিল প্রতিদিন ১ লাখ লিটার দুধ বিক্রি করা। তবে পথটি সহজ ছিল না। দুধের ব্যবসা ছিল চ্যালেঞ্জিং- গরুর যত্ন নেওয়া, দুধের সতেজতা নিশ্চিত করা এবং সরবরাহ শৃঙ্খল পরিচালনা করা। তবুও, এই হাল ছাড়েননি দুই বন্ধু।
কান্ট্রি ডিলাইটের লক্ষ্য ছিল জনসাধারণের কাছে ফ্রেশ, বিশুদ্ধ দুধ সরবরাহ করা। আজকাল বাজারে পাওয়া দুধ প্রায়শই ভেজাল হয় বা দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রসেস করা হয়। চক্রধর এবং নীতিন এই পদ্ধতি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথমদিকে স্বাভাবিকভাবেই এই দুই বন্ধুর কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তারা ৫০টি গরু দিয়ে শুরুটা করেছিলেন এবং দুই বছরের মধ্যে ৫০০টিতে পৌঁছানোর আশা করেছিলেন। তাদের এক্সেল শিটে লিখে রাখা হয়েছিল যে দুধের সরবরাহ দৈনিক ২০০ লিটার থেকে ৫,০০০ লিটারে বৃদ্ধি পাবে। বাস্তবে এই লক্ষ্য অর্জনে তিনগুণ বেশি সময় লেগেছিল। গরুর জন্য জমি খুঁজে বের করা, তাদের যত্ন নেওয়া এবং দুধের মান বজায় রাখা সহজ ছিল না। তবুও, তাঁদের কঠোর পরিশ্রম সফল হয়েছিল।
তারা গোয়ালাদের কাছ থেকে সরাসরি দুধ সংগ্রহ করতেন এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতেন। তাদের কোম্পানি এখন শুধু দুধই বিক্রি করে না, ঘি, পনির, দই, ফল, শাকসবজি এবং রান্নাঘরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও বিক্রি করে। এই সব কিছুই একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়, যেখানে গ্রাহকরা অর্ডার দেন এবং সাবস্ক্রিপশনের ভিত্তিতে ডেলিভারি পান। কোম্পানিটি বর্তমানে ১৮টি শহর এবং ১১টি রাজ্যে কাজ করে।
কোম্পানির মডেল অন্যান্য কোম্পানির থেকে অনেক আলাদা এবং বর্তমানে কান্ট্রি ডিলাইটের ৫ লাখের বেশি গ্রাহক রয়েছে, প্রতি মাসে ৫০ লাখের বেশি অর্ডার আসে। এরা সরাসরি গোয়ালাদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে, তাতে ভেজালের ঝুঁকি থাকে না এবং গোয়ালাদেরও বাজারের তুলনায় ভাল দাম দেওয়া হয়।
কান্ট্রি ডিলাইট দুধের মান পরীক্ষার কিটও সরবরাহ করে। পরীক্ষার পর দুধ পাস্তুরিত করা হয় এবং দ্রুত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
কোম্পানিটি এখন ভারতের ইউনিকর্ন ক্লাবে যোগদানের কাছাকাছি রয়েছে। চক্রধর এবং নীতিনের স্বপ্ন আরও বড়; তারা এটিকে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত করতে চান।


