ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। অথচ ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা নদীতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। দিনের পর দিন জাল ফেলেও জেলেরা ফিরছেন শূন্যহাতে। যে অল্প কিছু মাছ ধরা পড়ছে, তার বেশিরভাগই আকারে ছোট। বড় ইলিশের সংখ্যা এত কম যে সেগুলোর বাজার দর আকাশ ছোয়া। ফলে সাধারণ ক্রেতার পক্ষে কিনে খাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, হঠাৎ পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে নদীতে ইলিশের আনাগোনা কমে গেছে। পাশাপাশি মেঘনা নদী ও সাগরে বিপুল পরিমাণে ইলিশ শিকার হওয়ায় পদ্মার দিকে আর তেমন ইলিশ ঢুকছে না।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া, ঢেউখালী, আকোটের চর ও চর নাসিরপুর ইউনিয়নে প্রায় সাত হাজার মানুষ ইলিশ শিকার করে মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলে আছেন প্রায় ৬৫০ জন।
পদ্মায় মাছ ধরতে আসা জেলে জাহিদ শেখ বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে নদীতে যাচ্ছি, কিন্তু জাল খালি নিয়েই ফিরতে হচ্ছে। ৬-৭ জন মিলে যে কয়টা মাছ পাই, তা বিক্রি করে তেলের খরচও ওঠে না।’
আরেক জেলে আবুল ফরাজি বলেন, ‘আমাদের মূল পেশাই ইলিশ ধরা, কিন্তু এখন নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। দু-একটা পেলেও আকারে ছোট। আমরা যদি মাছই না পাই, তবে পরিবার নিয়ে টিকে থাকব কীভাবে? পূর্বপুরুষের পেশা ছাড়াও সহজ নয়।’

ইলিশ ব্যবসায়ী জয়নাল মোল্যা বলেন, ‘ভাদ্র মাসের পর পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে। ১০-১২ বছর আগে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, দামও ছিল হাতের নাগালে। এখন মাছ কম, দাম অনেক বেশি। বর্তমানে পদ্মার এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ হাজার টাকায়, ছোটগুলোর দামও ১-২ হাজার টাকার কম নয়।’
উপজেলা সদর বাজারে এক ইলিশের ক্রেতা আমান বলেন, ‘মেহমান আসায় ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। মাছ আছে, তবে দাম অস্বাভাবিক বেশি। সাইজেও ছোট। অনেক কষ্টে এক ডালা ছোট মাছ কিনলাম। যদি বাজারে মাছের জোগান বেশি থাকত, দামও হয়তো কম থাকত।’
সদরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, পানি প্রবাহের সঙ্গে ইলিশের চলাচলের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি নদীর পানি বাড়ায় পদ্মায় মাছের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। তবে মেঘনায় প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। পানি কমতে শুরু করলে পদ্মাতেও ভালো পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যেতে পারে।


