পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর চাষিরা। বর্ষার মৌসুমেও ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠে, বিলে, ডোবায় পানি না জমায় পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। তাই পাট কাটার উপযোগী তা ফেলে রাখা হয়েছে মাঠে।
এর মধ্যে কেউ কেউ অন্যের পুকুর ভাড়া নিয়ে জাগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো কোনো কৃষক পাট কেটে দুই থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে বিভিন্ন খালে নিয়ে জাগ দিচ্ছেন। এতে তাদের অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফসলের মাঠগুলো ভেজা কিন্তু পানি জমেনি। ডোবাতেও তেমন পানি নেই। অনেক জমিতে পড়ে আছে কৃষকের পাট। তবে ধরলা, বারোমাসিয়া, নীলকমল নদী এলাকার আশপাশের কৃষকরা গত সপ্তাহ থেকে অল্প করে জাগ দেওয়া শুরু করেছেন।
বিভিন্ন এলাকার চাষিরা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে তাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে প্রতিবছরই পাট জাগ দিতে নানান সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। এ ছাড়া উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার মতো বাঁধা তো আছেই।
পাট চাষে এসব সমস্যা বছরের পর বছর চলতে থাকলে অনেক চাষি পাটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের পাট চাষি বদিউজ্জামাল বলেন, ‘আধা বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পর্যন্ত বৃষ্টি না থাকায় জাগ দিতে পাড়ছি না।’
উপজেলার গজেরকুটি এলাকার পাট চাষি কিশোব চন্দ্র রায় ও ধীরেন চন্দ্র রায় বলেন, দুই তিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু জাগ তো দূরে থাক আমন ধানের জমিগুলোতে পানিই জমেনি। ফলে পানির অভাবে পাট কেঁটে ডোবায় জাগ দিতে পারছেন না তারা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদী এলাকার কৃষকরা কেউ কেউ পাট কাটতে শুরু করেছে। দুই তিন দিন থেকে কখনো হালকা, কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাত হলেও ধানের জমি ও ডোবায় পানি জমেনি। তাই জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।
তবে সরকার যেহেতু পলিথিনমুক্ত দেশ গড়ে পাটের দিকে ঝুঁকছে তাই আগামীতে পাট শিল্পে বড় পরিবর্তনের প্রত্যাশা তাদের। এ ছাড়া কৃষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে পাট চাষে আগ্রহী করে তুলতে পারলে এ অঞ্চলে সোনালি আঁশ পাটের সুদিন ফিরে আসবে বলে জানান তারা।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, কৃষি বিভাগ সব সময় পাট চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে। এজন্য চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এ বছর উপজেলার ৬ ইউনিয়নে ৪৮০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা পাটের চাষাবাদ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে নদী এলাকার আশপাশসহ প্রায় ৭৫ হেক্টর জমির পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হলে পাট চাষিদের পানির সমস্যা হবে না।’


