দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে চাষ হচ্ছে রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো ও আঙুরের মতো বিদেশি ফল। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এসব ফল বিক্রি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য শহরে। অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান কিংবা আঙুরের চাহিদা পূরণে সারাবছর আমদানি করা হয়। তবে এখন এসব ফল চাষ হচ্ছে দেশেই।
জানা গেছে, জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুণ্ডু ও সদর উপজেলায় এ বছর আঙুরের চাষ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। শখের বশে আঙুর চাষ করলেও ভালো ফলন পাওয়ায় বাণিজ্যিক আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। পতিত জমিতেও আঙুর, অ্যাভোকাডোর বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষিরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলক এসব বিদেশি ফলের আবাদ করেন তারা। তবে বছর ঘুরতেই দারুণ ফলন পাওয়ায় বিদেশি এসব ফল চাষে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।
কালীগঞ্জ উপজেলার চাচড়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা শাহিনুর রহমান তিন বিঘা জমিতে লাগিয়েছেন অ্যাভোকাডো। চারা রোপনের প্রায় ৫ বছর পর পেয়েছেন দারুণ ফলন। তার লাগানো গাছে গাছে এখন ঝুলছে অ্যাভোকাডো।
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে একজন কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে অ্যাভোকাডোর চারা নিয়ে আসি। এরপর সেটি বাগানে রোপন করি। প্রথম দিকে মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, কিন্তু পাঁচ বছর পর আমার গাছে প্রথম ফল আসে। প্রথম বছর ফলের উৎপাদন কম ছিল। এ বছর দারুণ ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে প্রচুর অ্যাভোকাডো ধরেছে।’
শাহিনুর রহমান বলেন, স্থানীয় বাজারে অ্যাভোকাডোর চাহিদা বেশি না থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ বড় বড় শহরের রেস্তোরাগুলোতে অ্যাভোকাডোর চাহিদা ব্যাপক। স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয় অ্যাভোকাডো। তবে ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে ঝিনাইদহের অ্যাভোকাডো কেজি প্রতি গড়ে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়।
কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা ও স্কুলশিক্ষক হাফিজুর রহমান লাগিয়েছেন লংগান। পেয়েছেন দারুণ সাফল্য। এ বছর তিনি লংগান বিক্রি করে বেশ আয় করেছেন।
তিনি বলেন, ‘লংগান বিদেশি ফল। এটি চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। পরিচর্যা করলেই হয়। রাসায়নিক কিংবা কীটনাশকের ব্যবহার বেশি করা লাগে না। আগামীতে রাম্বুটান সহ অন্যান্য কয়েকটি বিদেশি ফল চাষের পরিকল্পনা নিয়েছি।’
এদিকে জেলার মহেশপুর, হরিণাকুণ্ডু ও সদর উপজেলায় বেড়েছে আঙুর চাষ। সবুজ আঙুরের পাশপাশি এসব উপজেলায় রঙিন আঙুরের চাষ হচ্ছে। সদর উপজেলার বেতাই গ্রামের আঙুরচাষি আরিফুল ইসলাম বলেন, তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে আঙুর চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। আগামী বছর তিনি আঙুরের আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন।
মহেশপুর উপজেলার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি এ বছর তিন বিঘা জমিতে আঙুর চাষ করেছিলাম। বিদেশি আঙুরের অন্তত ১২টি জাতের চারা রোপন করে বাগান গড়েছি। জাতের ভিন্নতা থাকায় আমার বাগানে খয়েরি, লাল ও সবুজ আঙুরের ভালো ফলন পেয়েছি। আঙুরের দামও ভালো পাওয়া গেছে। আঙুর চাষের পাশাপাশি মানসম্মত চারা উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ মৌসুমে জেলায় ১ হেক্টর জমিতে রাম্বুটান আবাদ হয়েছে। কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় এই ফলের পরীক্ষামূলক চাষ করেছেন কৃষকরা। এ ছাড়া জেলায় ২ হেক্টর জমিতে অ্যাভোকাডো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কালীগঞ্জে ১ দশমিক ৭৫ হেক্টর, কোটচাঁদুপরে ১ হেক্টর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় শুণ্য দশমিক ২৪ হেক্টর জমিতে অ্যাভোকাডো আবাদ করেছেন কৃষকরা।
জেলার সদর উপজেলা, হরিণাকুণ্ডু, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদুপর ও মহেশপুর উপজেলায় ২ দশমিক ২৫ হেক্টর জমিতে আঙুরের পরীক্ষামূলক চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ০.৪৪ হেক্টর, কালীগঞ্জে ০.৫৫ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ০.৩১ হেক্টর, মহেশপুরে ০.৬৬ হেক্টর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ০.২৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বিদেশি আঙুরের আবাদ করেছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলার মাটির একটি বিশেষ গুণ আছে। এই মাটিতে নানান রকম বিদেশি ফলের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। পরীক্ষামূলক ভাবে কৃষকেরা চাষাবাদ শুরু করলেও সফলতা আসার পরে তা বাণিজ্যিক আবাদে রূপান্তরিত হচ্ছে। এটা আমাদের কৃষিতে এক দারুণ বিপ্লব বলা যায়।বিদেশি ফলের আবাদ বাড়লে ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। বাঁচবে কৃষক, সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।


