Saturday, December 13, 2025
Advertisement
Home কৃষি ক্যাম্পাস সামু‌দ্রিক শৈবাল থে‌কে উচ্চমূ‌ল্যের পণ্য উৎপাদন

সামু‌দ্রিক শৈবাল থে‌কে উচ্চমূ‌ল্যের পণ্য উৎপাদন

বাকৃ‌বি গ‌বেষণা

সামুদ্রিক শৈবাল বা সি–উইড, এক সময় যেটিকে সামুদ্রিক আগাছা হিসেবে গণ্য করা হতো, এখন সেটিই হয়ে উঠেছে প্রোটিন,সেলুলোজ ও খাদ্যের স্বাদবর্ধকের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। বিশেষ একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক এই আগাছাকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের পণ্যে রূপান্তর করেছেন। গবেষকদের ধারণা, এটি দেশের নীল অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও টেকসই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। এ গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন বাকৃবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হান্নান। এ ছাড়া পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হক সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।

গবেষকদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি হলো বায়োরিফাইনারি বা জৈব শোধনাগার । এই পদ্ধতিতে সামুদ্রিক শৈবালকে জলীয়করণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিষ্কাশন করে এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদান আলাদা করা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে শৈবালের প্রতিটি অংশই ব্যবহার করা যায়। ফলে খুব কম বর্জ্য তৈরি হয়। সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের (এসসিএমএফপি) অর্থায়নে এ গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। এই গ‌বেষণার মূল লক্ষ‌্য সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া।

গবেষক অধ্যাপক ড. মো. হান্নান বলেন, গবেষণায় গ্র্যাসিলারিয়া টেনুইস্টিপিটাটা (Gracilaria tenuistipitata) বা লাল রঙের সুতার মতো সামুদ্রিক শৈবাল ব্যবহার করা হয়েছে। এ শৈবাল থেকে পর্যায়ক্রমে নিষ্কাশনের মাধ্যমে রঞ্জক পদার্থ, অ্যাগার (জেল–উৎপাদক উপাদান) এবং সেলুলোজ এই তিনটি মূল্যবান উপাদান সফলভাবে পাওয়া গেছে। বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।

নিষ্কাশন পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে জলীয় পদ্ধতিতে শৈবাল থেকে ফাইকোবিলিপ্রোটিন রঞ্জক সংগ্রহ করা হয়। এতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী গুণ রয়েছে। এই প্রাকৃতিক রঞ্জক দইসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যে ব্যবহার করা যায়, যা স্বাদ, গন্ধ, রং ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। এরপর অবশিষ্ট অংশ থেকে অ্যাগার উৎপাদিত হয়, যার উৎপাদন হার ১৫ শতাংশ পাওয়া গেছে। শেষে যে অংশটি অবশিষ্ট থাকে, তা থেকে সেলুলোজ সংগ্রহ করে অ্যাগার ও জিলেটিনের সঙ্গে মিশিয়ে একটি শক্তিশালী, অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধী ও জৈব-বিয়োজ্য বায়োফিল্ম তৈরি করা হয়েছে। এই বায়োফিল্ম প্যাকেজিং ও বায়োমেটেরিয়াল শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী।

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের জন্য নীল অর্থনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাকৃবির এই গবেষণা সামুদ্রিক সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বশেষ

কমলা চাষ করে সফল মাদারীপুরের রাসেল

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মৃধাকান্দি এলাকায় কমলা চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল হোসেন।দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে বাবার...

পুরোনা আলু সংরক্ষণ করার অনুরোধ কৃষি উপদেষ্টার

আলুচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোনো আলু সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো....

দেশে ব্রুসেলা জীবাণুর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

দেশে গবাদিপশুর অন্যতম পরিচিত রোগ হলো ব্রুসেলোসিস। ব্রু‌সেলা অ‌্যা‌বর্টাস (Brucella abortus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। এই জীবাণুতে গবাদিপশু আক্রান্ত হ‌লে...

ইউটিউব দেখে ‘কালো ধান’ চাষে সাফল্য

ব্ল‍্যাক রাইস বা কালো ধান। কেউ বলেন ‘প্রিন্স অফ রাইস’। এ ধানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার...