Saturday, December 13, 2025
Advertisement
Home উদ্যান কৃষি নদীর স্রোত ব্যবহার করে জাম্বুরার পরিবহন ব্যয় কমাচ্ছেন পাহাড়ি কৃষকরা

নদীর স্রোত ব্যবহার করে জাম্বুরার পরিবহন ব্যয় কমাচ্ছেন পাহাড়ি কৃষকরা

পাহাড়ে এখন চলছে জাম্বুরার মৌসুম। পাহাড়ের গাছে গাছে ঝুলে থাকা এসব জাম্বুরা অত্যন্ত উপাদেয়। তবে এই ফল পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা যেমন সহজ নয়, তেমনি সহজ নয় সরাসরি বাজারজাত করা। তাই পাহাড়ি নদী আর ছড়ায় ভাসিয়ে জাম্বুরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করে পাহাড়ি কৃষকরা।

সরেজমিনে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। প্রথমে দেখে মনে হতে পারে জাম্বুরা পচে পানিতে পড়ে ভাসছে। কিন্তু আসলে তা নয়। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির পার্বত্যাঞ্চলে এখন ভাসমান জাম্বুরার মৌসুম। যেখানে স্বাভাবিকভাবে জাম্বুরা গাছে ঝুলে থাকার কথা, সেখানে বর্তমানে নদী ও ছড়ার জলে ভাসছে অসংখ্য জাম্বুরা। পাহাড়ি বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে স্থানীয় কৃষকরা এগুলো পানিতে ভাসিয়ে দেন। নির্দিষ্ট স্থানে এসে বাঁশ দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট জালে ফলগুলো আটকানো হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় বাছাই ও প্রক্রিয়াজাতকরণ। পৌঁছে দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

কৃষক অসিত বরন চাকমা বলেন, পাহাড়ি মেঠো কাঁচা সড়কপথে পাহাড়ি গ্রাম থেকে ফল পরিবহণে খরচ হয় অনেক বেশি। কিন্তু পানির স্রোত ব্যবহার করে ভাসিয়ে আনার কারণে সেই খরচ কমে যায়। নদীর স্রোতে ভেসে আসা জাম্বুরা খুব সহজেই প্রধান সড়কের পাশে পৌঁছে যায়। সড়ক পর্যন্ত আনার এই সহজ কৌশল শুধু ব্যয় সাশ্রয়ীই নয়, ফলের ক্ষতিও অনেকটা কমিয়ে দেয়। আর জাম্বুরা পানিতে ভাসিয়ে দিলে সহজেই বোঝা যায় কোনটি পচা। এতে বাছাই কাজও সহজ হয়ে যায়

কালায়ন চাকমা বলেন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফল পরিবহণ করায় তাদের লাভ বেড়েছে। কারণ তারা বাড়তি খরচ ছাড়াই দূরবর্তী বাজারে ফল পৌঁছে দিতে পারছেন। প্রতিদিন পাহাড়ি নদী ও ছড়ায় ভেসে আসা শত শত জাম্বুরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। এভাবে সংগ্রহ করা জাম্বুরা আকারে বড়, রসালো ও স্বাদে অনন্য। ফলে ক্রেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে আলাদা আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. রইস উদ্দিন বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের বাজারে এখন পাহাড়ি এই জাম্বুরার চাহিদা বেড়েছে। জাম্বুরা মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ করা অন্যতম ফল। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এসব গাছ কোনো ধরনের কৃত্রিম সার বা কীটনাশক ছাড়াই ফল দেয়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ ফল হিসেবে এর কদর দিন দিন বাড়ছে।

মহালছড়ির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ রসুল বাসসকে বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া জাম্বুরা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষকরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফল পরিবহণ করে খরচ সাশ্রয় করছেন, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। এই জাম্বুরা আকারে বড়, স্বাদে অনন্য এবং বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা কৃষকদের আরও আধুনিক চাষাবাদ ও বাজারজাতকরণে সহায়তা প্রদান করছি।

তিনি বলেন, ভাসমান জাম্বুরার এই দৃশ্য শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই নয়, বরং পাহাড়ি কৃষকদের বুদ্ধিমত্তা ও টিকে থাকার সংগ্রামের প্রতিফলন। পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে পরিবহণ ব্যয় বাঁচানো এবং সহজ উপায়ে দেশের নানা প্রান্তে ফল পৌঁছে দেওয়ার এই প্রক্রিয়া স্থানীয় অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বশেষ

পুরোনা আলু সংরক্ষণ করার অনুরোধ কৃষি উপদেষ্টার

আলুচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোনো আলু সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো....

দেশে ব্রুসেলা জীবাণুর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

দেশে গবাদিপশুর অন্যতম পরিচিত রোগ হলো ব্রুসেলোসিস। ব্রু‌সেলা অ‌্যা‌বর্টাস (Brucella abortus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। এই জীবাণুতে গবাদিপশু আক্রান্ত হ‌লে...

ইউটিউব দেখে ‘কালো ধান’ চাষে সাফল্য

ব্ল‍্যাক রাইস বা কালো ধান। কেউ বলেন ‘প্রিন্স অফ রাইস’। এ ধানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার...

বেড়েছে প্রাণিসম্পদ, হাঁস-মুরগি ও জলজ চাষে উৎপাদন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রাণিসম্পদ, হাঁস-মুরগি এবং জলজ চাষে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যার ফলে মাছ, দুধ,...