দিনাজপুর সদর উপজেলায় আমন ধানের পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন কৃষকরা। ধানের ক্ষেতে সহজে পোকা দমনে এ পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সদর উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষক এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানক্ষেতের পোকা দমনে সফল হয়েছেন।
আমনের পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি হলো, ধানের জমিতে গাছের ডাল, বাঁশের কঞ্চি বা খুঁটি পুঁতে দেওয়া, যা পাখির বসার জায়গা হিসেবে কাজ করে। এই ডালগুলোতে বসে পাখি ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। ফলে পোকার আক্রমণ কমে যায়। এটি ব্যয়বিহীন, পরিবেশবান্ধব এবং কীটনাশকমুক্ত পদ্ধতি, যা ফসলের উৎপাদন খরচ কমায় এবং নিরাপদ ফসল পেতে সাহায্য করে।
সদর উপজেলা কৃষি দপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এ বছর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ১৬০ হেক্টর।
দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরে পোকা নিধন বিষয় নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত কর্মকর্তা রবিউল হাসান বলেন, ধান চাষ ও ফসল উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ। জমিতে সার দেওয়ার পর থেকেই ক্ষেতে ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, চুঙ্গি, পাতা মোড়ানো ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এ সব পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকরা কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব পার্চিং পদ্ধতি এবং ডেড ও আলোর ফাঁদ ব্যবহারে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। তবে এর মধ্যে পার্চিং পদ্ধতি কৃষিবান্ধব।
দিনাজপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা আমন ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের খুঁটি ও বিভিন্ন গাছের ডাল খুঁটি হিসেবে পুঁতে রেখেছে। এসব পুঁতে রাখা ডালের খুঁটি ওপর দোয়েল, ফিঙ্গে, শালিকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। পাখিগুলো ক্ষেতের পোকা খেয়ে ধানের উপকার করছে।
সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের কৃষক মো. ফরিদুক ইসলাম (৪০) বলেন, ‘ধানক্ষেতে ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, চুঙ্গি, পাতা মোড়ানো ও মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে আমরা সফল হয়েছি।’
মহাব্বতপুর গ্রামের কৃষক সোলাইমান আলী (৫২) বলেন, ‘ধানক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছি। ক্ষেতের মধ্যে পুঁতে রাখা ডালে পাখি বসে ক্ষেতের পোকা খেয়ে ফেলছে। ফলে আমারা এ সহজ পদ্ধতি ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছি।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিকারক পোকার হাত থেকে ক্ষেতের ফসল রক্ষায় সদর উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে পার্চিং প্রদ্ধতি ব্যবহারে অধিকাংশ কৃষক উপকৃত হয়েছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্যাহ আল মাসউদ বলেন, পার্চিং পদ্ধতি বালাই-নাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখছে। সেইসঙ্গে জমিতে জৈব সার ও গোবর প্রয়োগে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই উপজেলাতে ধান চাষে কয়েক বছর ধরে পার্চিং পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা গত দুই বছর ধরে ধানক্ষেতের পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি।’
তিনি বলেন, এবার ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে উপশী জাতের ধান ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩০ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৯৯০ হেক্টর ও হাইব্রিড ১১ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু এবার অনুকূল আবহাওয়া, সঠিক সময়ে বৃষ্টির পানি সমস্যা না থাকা ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কৃষকেরা অতিরিক্ত ৫ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন।


