Saturday, December 13, 2025
Advertisement
Home উদ্যান কৃষি রেশম ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার

রেশম ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার

রেশম চাষ ও শিল্পের উন্নয়ন এবং মাঠ পর্যায়ে প্রচারমূলক কর্মকাণ্ড গতিশীল করার মাধ্যমে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রেশমখাতের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে সরকার। এ জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

রাজশাহীর রেশম ২০১৭ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। রাজশাহীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড (বিএসডিবি) দেশের রেশম খাতকে পুনরুজ্জীবিত ও সম্প্রসারিত করতে কাজ করছে।

বিএসডিবি মহাপরিচালক (ডিজি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কিছু লোককে রেশম চাষের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।’

রেশম চাষের নার্সারিগুলো আধুনিকায়নের পাশাপাশি ঈশ্বরদী, রংপুর, কুমিল্লা, কোনাবাড়ী ও বগুড়া নার্সারি কেন্দ্রে তুঁত গাছ ও রেশম পোকার উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রেশম চাষি ও উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে কৃষি পদ্ধতিতে ১ হাজার ১০০ বিঘা জমিতে রেশম চাষ সম্প্রসারিত করা হয়েছে এবং দক্ষ জনবল তৈরির জন্য ৩ হাজার ২৭০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ২ হাজার ৩৬৯ জন রেশম চাষিকে রেশম পোকা পালনের জন্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ তুঁত গাছ কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

রেশম পোকা পালনের জন্য কৃষকদের ৮৭৪টি ঘর নির্মাণের পাশাপাশি বর্তমানে ১২০ বিঘা জমিতে তুঁত বাগানের রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করা হচ্ছে।

রেশম পোকা ও কাঁচা রেশমের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রেশমের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে রেশম চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ে ৪ হাজারের বেশি মানুষ সরাসরি রেশম চাষের সাথে সম্পৃক্ত।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৫৯টি কেন্দ্রের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। রেশমের পণ্য বিপণনের পাশাপাশি রেশম সুতা ও তুঁত চাষ এবং রেশম শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থাও রয়েছে।’

রেশম উৎপাদন বৃদ্ধির চূড়ান্ত লক্ষ্যে কৃষকদের প্রধান ফসল হিসেবে তুঁত চাষের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। বর্তমানে, বসতবাড়ি এবং রাস্তার পাশের খালি জায়গায় তুঁত গাছ চাষ করা হয়।

বিএসডিবি ডিজি বলেন, প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন, দরিদ্রদের জন্য বহুমুখী এসব কার্যক্রম কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে বড় ভূমিকা রাখতে পারে

বিএসডিবি পরিচালক (উৎপাদন ও বিপণন) নাসিমা খাতুন বলেন, পুরো অঞ্চলে রেশম মথ উৎপাদনের পাশাপাশি একই জমি থেকে অতিরিক্ত আয় বৃদ্ধির জন্য আন্তঃফসল চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে।রেশম উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের মধ্যে তুঁত গাছের সঙ্গে অন্যান্য সবজি ও মশলা চাষের ব্যাপারে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

তুঁত চাষ বর্তমানে অনেকটাই পতিত জমি ও রাস্তার পাশের জায়গার ওপর নির্ভরশীল।

নাসিমা বলেন, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট দীর্ঘ গবেষণার পর ২০টি রেশম পোকা ও ১৫টি তুঁত গাছের জাত উদ্ভাবন করেছে যা রেশম খাতের গৌরবময় ইতিহাস ফিরিয়ে আনার আশা জাগিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রেশমের নানা ধরনের উদ্ভাবনের ফলে রেশম সুতার আমদানির ওপর নির্ভরতা হ্রাসের পাশাপাশি রেশম উৎপাদন প্রায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই উদ্ভাবনের ফলে কৃষকরাও ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন।

বিএসডিবির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান তালুকদার বলেন, ২০১৮ সালে রাজশাহী রেশম কারখানা পুনরায় চালু করা হয়েছে এবং এখানে ১৯টি পাওয়ার লুমে কাপড় বোনা হয়। তারপর থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত ৫৩ হাজার মিটার কাপড় তৈরি করা হয়েছে। কারখানার শো-রুমের মাধ্যমে দিনে প্রায় আড়াই লাখ টাকার রেশমি কাপড় বিক্রি হচ্ছে।স্থানীয় কারিগরদের বোনা ও ডিজাইন করা রেশম কাপড়ের এই অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিত্তবানরা প্রায়শই রেশমের শোরুমগুলোতে ভিড় করেন।

সপুরা সিল্ক-এর শোরুম ইনচার্জ সাইদুর রহমান বলেন, ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে মসলিনের কাটোয়ার শাড়ি। এসব শাড়ি ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শোরুমগুলোতে সিল্কের তৈরি শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস এবং শিশুদের পোশাক পাওয়া যায়।

ঊষা সিল্কের শোরুম ইনচার্জ নূর আলম বুলবুল বলেন, তাদের শাড়িগুলো ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ৫০ হাজার ৫০০ টাকায় এবং থ্রি-পিস ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ঐতিহ্যবাহী রেশম খাতের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা দরকার। রেশম এখনো সারা দেশে ভাবমূর্তি ও আভিজাত্য ধরে রেখেছে।

তিনি বলেন, রেশম কেবল রাজশাহীর জন্যই নয়, সারা দেশের জন্য গর্ব এবং ঐতিহ্যের। এই খাতকে লাভজনক করে তোলার পাশাপাশি এর সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া উচিত।

লিয়াকত আলী আরও বলেন, দেশ বেসরকারিভাবে প্রায় ৮০টি ছোট ও মাঝারি রেশম কারখানা রয়েছে, যাদের বছরে ২৫.৫০ মিলিয়ন মিটার কাপড় তৈরির সক্ষমতা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বশেষ

কমলা চাষ করে সফল মাদারীপুরের রাসেল

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মৃধাকান্দি এলাকায় কমলা চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল হোসেন।দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে বাবার...

পুরোনা আলু সংরক্ষণ করার অনুরোধ কৃষি উপদেষ্টার

আলুচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোনো আলু সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো....

দেশে ব্রুসেলা জীবাণুর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

দেশে গবাদিপশুর অন্যতম পরিচিত রোগ হলো ব্রুসেলোসিস। ব্রু‌সেলা অ‌্যা‌বর্টাস (Brucella abortus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। এই জীবাণুতে গবাদিপশু আক্রান্ত হ‌লে...

ইউটিউব দেখে ‘কালো ধান’ চাষে সাফল্য

ব্ল‍্যাক রাইস বা কালো ধান। কেউ বলেন ‘প্রিন্স অফ রাইস’। এ ধানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার...