ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গত রবিবার রাতে নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতার অভিযোগ তুলে চোখে লাল কাপড় বেঁধে ‘রেড মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন হল থেকে গুচ্ছ গুচ্ছ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এসে জমায়েত হতে থাকেন। এরপর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা মাথায় লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনের করিডর প্রদক্ষিণ করে সমাবর্তন চত্বরে এসে শেষ করেন।
পরে তারা মাথার কাপড় চোখে বাঁধেন। এ সময় তাদের হাতে প্রশাসন, আইন এবং সিন্ডিকেটে কৃতক শিক্ষার্থীদের তাচ্ছিল্যের অভিযোগে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ছিল।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আমাদের মধ্যে সাড়ে ৪ ঘণ্টার আলোচনা হয়। তখন অবিলম্বে হল ত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাহার করা, আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অ্যাকাডেমিক বা প্রশাসনিক হেনস্থা না হয় সে বিষয়ে লিখিত প্রদান করা এবং আগামী ৭ দিনের মধ্যে ক্লাস ও পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার দাবি জানাই।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এসব দাবি বাস্তবায়নের কথা ছিল, কিন্তু তারা তা করেননি। বরং তারা পুনরায় আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা পূর্বনির্ধারিত আলোচনার সাথে সাংঘর্ষিক। আমাদের পূর্বের দাবি বাস্তবায়ন করে লিখিত স্টেটমেন্ট দেওয়ার পরই আমরা পরবর্তীতে আলোচনায় বসতে রাজি আছি।’
চোখে লাল কাপড় বাঁধা অবস্থায় আইনের প্লাকার্ড হাতে আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থী নিছুম বলেন, ‘দেখুন, আমি আইন। আমরা চোখ বাঁধা, নির্লজ্জ। হামলাকারী বহিরাগতদের শাস্তি দিতে আমার নিকট কোনো আইন নাই।’
চোখে লাল কাপড় বাঁধা অবস্থায় সিন্ডিকেটের প্ল্যাকার্ড হাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অথৈ বলেন, ‘আমি সিন্ডিকেট। আমরাও চোখ বাঁধা। আমি শিক্ষার্থীর জন্য কিছু করতে অপারগ।’
প্রশাসন লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে আরেক শিক্ষার্থী মিরা বলেন, ‘আমি প্রশাসন। আমার চোখ অন্ধ। শিক্ষার্থীরা বহিরাগতদের দ্বারা মার খায়, আমি কিছুই দেখি নাই। সেদিনের করুণ অবস্থা সর্ম্পকে কিছু জানি না।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও দুটি নতুন দাবি উত্থাপন করেন। তা হলো
১. ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিকে পুনর্গঠন করে সংশ্লিষ্ট বহিরাগত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
২. তদন্ত কমিটি দ্বারা কোনো শিক্ষার্থী যাতে হেনস্থার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
এ বিষয়ে বাকৃবির ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো শহিদুল হক বলেন, ‘গতকাল আলোচনার বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের লিখিত আকারে দেওয়ার কথা ছিল। যার ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হতো, কিন্তু তারা এই ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করেনি। ফলে সিন্ডিকেট সভা না হওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’


