মাচার ওপরে তরমুজের সবুজ পাতা। নিচে ঝুলে আছে কালো রঙের তরমুজ। গাছ থেকে ছিঁড়ে না পড়ে সেজন্য প্রতিটি তরমুজে দেওয়া হয়েছে জালি। এমন দৃশ্য নওগাঁর পত্নীতলা, মহাদেবপুর, রাণীনগর ও সদর উপজেলার মাঠে মাঠে। এসব জমিতে আগে পটল ও করলা চাষ করলেও এখন বর্ষা মৌসুমে ‘মার্সেলো’ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন চাষিরা।
মাচায় ও মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন নওগাঁর চাষিরা। এই পদ্ধতিতে চাষ করা তরমুজের অধিক ফলনে তারা খুশি।
জানা গেছে, এ জাতের তরমুজ অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি। ফলে চাষিদের লাভও বেশি হচ্ছে। লম্বাটে ডিম্বাকৃতির এই তরমুজের ভেতরের অংশ গাঢ় লাল রঙের।
মার্সেলো জাতের প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়ে থাকে ৩-৫ কেজি। আর প্রতি বিঘায় দেড় থেকে দুই হাজারটি তরমুজ পাওয়া যায়। মার্সেলো জাতের এই তরমুজ উচ্চমাত্রায় ভাইরাস সহনশীল। প্রতিদিনই আগ্রহী চাষিরা বর্ষাকালীন তরমুজের ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন জমিতে। গত জুন মাসে তরমুজের চারা রোপণ করা হয়েছে। গাছ লাগানোর ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে ফল তোলা যায়।
রাণীনগরের মার্সেলো তরমুজ চাষি নিরাঞ্জন চন্দ্র প্রামানিক বলেন, তিনি প্রতি বছর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে নতুন নতুন ফসল চাষ করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ২৫ শতক জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই বিষমুক্ত মার্সেলো তরমুজ চাষ করেছেন। বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। কম পরিশ্রমে ভালো দাম পেয়ে খুশি তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি তরমুজ চাষ হয়ে থাকে গ্রীষ্মকালে, কিন্তু আমাদের এ বরেন্দ্র জেলায় বর্ষাকালে চাষ করা দেখে প্রতিদিন তার তরমুজের ক্ষেত দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসছেন নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা। তাদের পরামর্শসহ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।’
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা কামাল মাহমুদ শিপন বলেন, ‘নিরাঞ্জন দাদার তরমুজের ক্ষেত দেখে খুবই ভালো লাগছে। তার সঙ্গে অনেক কথা হলো এই তরমুজের বিষয়ে। খেয়ে দেখলাম খুব সুস্বাদু ও মিষ্টি। আগামী বছর দুই বিঘা জমিতে চাষ করব আশা করি।’
উপজেলার কাশিমপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের দম্পতি আলেক বেগ ও কুলসুম বানু বলেন, ‘আগে আমরা বাজার থেকে তরমুজ কিনে আনতাম। এখন দেখি গ্রীষ্মকালের তরমুজ বর্ষাকালে ধরেছে থোকায় থোকায়। অবাক করা বিষয়। খুব সুন্দর লাগছে দেখে। দুটি তরমুজ কিনলাম ৫০ টাকা কেজি দরে। দুটি তরমুজের ওজন ৮ কেজি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষমুক্ত তরমুজ চাষ করতে মাচায় ও মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল মার্সেলো জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে জেলার চারটি উপজেলায়। ভেতরে গাঢ় লাল রঙের এ তরমুজের স্বাদ খুব ভালো। কম খরচের পাশাপাশি বর্ষাকালে এই তরমুজ চাষ হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাই কৃষকরা বর্ষাকালীন তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।


