ধানক্ষেতে হাঁস ও মাছ চাষ করে ভাগ্য বদলে গেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কৃষক আব্দুর রহিমের (৩৩)। উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামের আব্দুর রহিম এখন বছরে আয় করছেন প্রায় ৬ লাখ টাকা। অভাব জয় করে তিনি হয়েছেন এলাকার একজন আদর্শ কৃষক। তাকে আদর্শ মেনে অনেক কৃষক এখন সমন্বিত চাষে লাভবান হচ্ছেন।
আব্দুর রহিমের বাবা মজিবর রহমান একজন চাষি ছিলেন। সংসারের ব্যয় মেটাতে তিন একর জমিতে ধান চাষ করেও প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হতো তাদের। এই অবস্থা দেখে ছাত্রজীবনেই রহিম ঠিক করেন চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকে পেশা হিসেবে নেবেন, তবে নতুন কিছু করে দেখাবেন।
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা থেকে পাঁচ হাজার টাকায় ২০০ হাঁসের বাচ্চা কিনে আনেন। খেতের পাশে খাল কেটে তৈরি করেন হাঁসের ঘর। ১০৭ দিন পর হাঁস বিক্রি করে পান ৭৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে লাভ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এর পরের বছর এক একর জমিতে বাঁধ দিয়ে শুরু করেন ধান, হাঁস ও মাছের সমন্বিত খামার। ওই বছরেই তিনি আয় করেন ১ লাখ টাকা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
বর্তমানে রহিমের খামারে একসঙ্গে ধান, হাঁস ও মাছ উৎপাদন হয়। হাঁস জমির পোকামাকড় খেয়ে ফেলে, হাঁসের বিষ্ঠা মাছের খাবার হিসেবে কাজে আসে, মাছের নাড়াচাড়ায় জমির নিচের মাটি নরম থাকে ফলে জমির উর্বরতা বাড়ে এবং ধানের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। এই প্রাকৃতিক ভারসাম্যে তৈরি হয়েছে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা।

আব্দুর রহিম বলেন, ‘কৃষি একটু চিন্তা করে করলে অনেক লাভবান হওয়া যায়। আমি শুধু ধান চাষে আটকে থাকিনি, হাঁস ও মাছকে এতে যুক্ত করে দেখেছি কেমন আয় বাড়ে। এখন সব মিলিয়ে বছরে ৬ লাখ টাকার বেশি আয় করি।’
রহিমের সফলতা দেখে তার এলাকার অনেক কৃষক এখন একই পদ্ধতিতে চাষ করছেন। রহিমাপুর গ্রামের এমদাদুল হক, আশরাফুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান, আবু তালেব, সফি উল্লাহ, বাদশা আলম ও মোস্তফা কামাল তারা এখন ধানখেতে হাঁস-মাছ চাষ করে সচ্ছলতা এনেছেন পরিবারে।
পাশের বিষ্ণপুর গ্রামেও অনেকে যুক্ত হয়েছেন এই ধারায়। কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ধান এখন ফাও আবাদ। হাঁস-মাছের খরচেই ধান উঠে আসে। ৪০ শতকে হাঁস-মাছ চাষে দেড় লাখ টাকার মতো আয় হয়।
কৃষক আবু তালেব বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছু লোকসান হয়েছিল। পরে রহিম ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এখন সফলতা পাচ্ছি।’
এ বিষয়ে তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিবা রানী রায় বলেন, ‘সমন্বিত চাষ করলে জমিতে কম কীটনাশক লাগে, ফলে পরিবেশও সুরক্ষিত থাকে। ধান, মাছ ও হাঁস তিনটিই হয় নিরাপদ। রহিমের দেখানো পথ ধরেই এখন অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।’


