জমির বৈজ্ঞানিক উপাদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মূল্য নিরুপণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জমির পুষ্টি উপাদান, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ছাড়াও মাটির বিভিন্ন উপাদান কমে যাওয়ার কারণে রাষ্ট্রের কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে।অর্থনৈতিকভাবে কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়ছে এসব নিয়ে গবেষণা করতে হবে।’
আজ রবিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) আয়োজিত ‘অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক, আর্থিক ও কারিগরি কার্যক্রম বাস্তবায়নে কৌশলবিষয়ক’ দিনব্যাপী সেমিনারের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে উল্লেখ করে মো. জাকির হোসেন বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হলে কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। এতে নানাবিধ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীর ও অনেক ক্ষেত্রে দেশসমূহ ক্ষতির শিকার হয়। জাতি কাক্ষিতসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। যথাসময়ে সঠিক কাজটি করা যায় না। তাই আর্থিক ব্যবস্থা সুন্দর হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
নানা ধরনের ক্ষতির কারণে মৃত্তিকা সম্পদ কতটা হুমকিতে রয়েছে তার সঠিক চিত্র তুলে আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষয়িঞ্চুতার কারণে মৃত্তিকা সম্পদ কি তার মূল্য ধরে রাখতে পারছে? এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ৩০-৪০ বছর পর মাটির মূল্যমান কী হবে, ফসল উৎপাদনে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ দরকার।
জাকির হোসে বলেন, ‘মাটির মান নষ্ট হয়ে গেলে ফসল উৎপাদন করতে পারবো না। আমাদের এক কেজি ধানের জন্য ৩৭০০ লিটার পানি ব্যয় হয়। সে হিসেবে ধানের দাম ৩৭ টাকা কেজি কী করে হয়?’
চাষাবাদে পরিবর্তন আনতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, একই ধরনের ফসল মাটির উর্বতা নষ্ট করে।মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমছে। ধইঞ্চা চাষ কমে গেছে। ডাল উৎপাদন কমেছে।লবণাক্ত জমিতে মুগডাল বেশি উৎপাদন হয়, অথচ সেদিকে মনোযোগ নেই। সবচেয়ে কম পানিতে ফসল করা যায় সেই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ এক ফসলে না থেকে নানা ধরনের ফসল ফলিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়াতে হবে।
বনজ সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে হবে দাবি করে জাকির হোসেন বলেন, সুন্দরবনের গোলপাতা গাছ থেকে গুড় সংগ্রহ করা সম্ভব। সেই পদ্ধতির চর্চা করতে হবে।তিনি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার ব্যাপারেও আলোকপাত করেন।তা ছাড়া খাদ্যের সঙ্গে পরিবেশ ও মাটির সম্পর্ক নিয়ে বিশেষজ্ঞ আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আমরা যেসব খাদ্য উৎপাদন করছি তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিনা, পরিবেশের সঙ্গে মাটির স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের জন্য বিশেষজ্ঞ আলোচনা দরকার।
স্বাগত বক্তব্যে এসআরডিআই-এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে। সে অঞ্চলের মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে।’
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বর্তমানে ভূমিকম্পের মাত্রা বাড়ছে। সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে। সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ায় বাড়ছে লবণাক্ততা। এতে দক্ষিণাঞ্চলের জমিতে ফসলের পরিমাণ কমছে।
এসআরডিআই-এর মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বেগম সামিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. জাকির হোসেন। এতে বক্তব্য দেন এসআরডিআই-এর মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার ঢাকার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন, বিভাগীয় কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের ড. মো. আফসার আলী ও রংপুরের মো. আব্দুল হালিম প্রমুখ।


