Saturday, December 13, 2025
Advertisement
Home ফসল শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা

শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা

শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। অন্যান্য ফুলের মতো শাপলাও সৌন্দর্যে কম যায় না। তবে এ ফুলটি সবজি হিসেবে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। তাই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান, লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক শ পরিবার

লৌহজং ও শ্রীনগর বেশির ভাগই আলুচাষের জমি। চার থেকে পাচ মাস এখানে কৃষি জমিগুলো পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কোনো কাজ নেই এসব জমিতে। আর এসব জমির পানিতে প্রচুর পরিমাণে শাপলা জন্ম নেয়। এসব এলাকার অনেক কৃষক বর্ষা মৌসুমে শাপলা তুলে তা বিক্রির পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

শ্রীনগর ইউনিয়নের গাদিঘাট বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী জলিল মিয়া বলেন, এ সময় একেক জন কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ মুঠো সংগ্রহ করতে পারে।পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে একসঙ্গে করে। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ তালতলায় , হাসাড়া, ছন বাড়ীর মোড় ও আড়িয়ল বিলের পাশে শাপলার পাইকারি ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।এখান থেকে শাপলা কিনে ঢাকার যাত্রাবাড়ী সহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকে।

শাপলা
শাপলা হাতে কয়েক কিশোর

ঢাকার পাইকার করিম মিঞা বলেন, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ২০ টাকা দরে কেনা হয়। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ মোট ২৭ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী আড়তে শাপলা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা মোঠা। কোনো রকম পুঁজি ছাড়াই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সিরাজদিখানসহ জেলার কয়েক শ পরিবার।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধান, পাট ও ধইঞ্চাক্ষেতে শাপলা বেশি জন্মায়। এ ছাড়া জেলার খাল-বিলগুলোতেও শাপলা ফুল জন্মে থাকে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা।

shapla picture
বিক্রির জন্য তুলে রাখা শাপলা

শাপলা সংগ্রহকারীরা ভোরে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকেন। কয়েকজন শাপলা সংগ্রহকারী জানান, এ সময়ে একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্ছ ৭০ মোঠা (৭০-৮০ পিছ শাপলায় ১ মোঠা ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার এসব শাপলা সংগ্রহকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে একত্রে করেন। দিন শেষে ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা আয় করে থাকেন। বছরের ৪ মাস এ কাজ করেন।

উপজেলার রসুনিয়া গ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া বলেন, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা কিনে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ২০-৩০ টাকা দরে ক্রয় করেন তিনি। তারপর ট্রাক ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ পায় ৩০ টাকার মতো খরচ পড়ে।

এই বিষয়ে শ্রীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহসিনা জাহান তোরন বলেন, ‘শাপলা আসলে কোনো কৃষি পণ্য আওয়াতাভুক্ত নয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে কৃষিজমি ও পুকুর কিংবা ডোবাতে জন্ম নেয়। এই বিষয়ে আমাদের কোনো পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। তবে আমরা চেষ্টা করি কৃষকদের সহায়তা করার। এ ছাড়া ও আমারা কৃষকদের শাপলা বেশি দিন সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে বেশির ভাগ শাপলা ঢাকাতে বিক্রি হয়ে থাকে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বশেষ

কমলা চাষ করে সফল মাদারীপুরের রাসেল

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মৃধাকান্দি এলাকায় কমলা চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল হোসেন।দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে বাবার...

পুরোনা আলু সংরক্ষণ করার অনুরোধ কৃষি উপদেষ্টার

আলুচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোনো আলু সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো....

দেশে ব্রুসেলা জীবাণুর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

দেশে গবাদিপশুর অন্যতম পরিচিত রোগ হলো ব্রুসেলোসিস। ব্রু‌সেলা অ‌্যা‌বর্টাস (Brucella abortus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। এই জীবাণুতে গবাদিপশু আক্রান্ত হ‌লে...

ইউটিউব দেখে ‘কালো ধান’ চাষে সাফল্য

ব্ল‍্যাক রাইস বা কালো ধান। কেউ বলেন ‘প্রিন্স অফ রাইস’। এ ধানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার...