দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের প্রধান উৎস হলো ব্রয়লার মুরগির মাংস। খামারের সঠিক জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে অল্প বিনিয়োগে দ্রুত সময়ে লাভ হওয়ায় এই খাতের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। একটি ব্রয়লার মুরগি ১ কেজি ৪০০ গ্রাম খাদ্য খেয়ে প্রায় ৪শ গ্রাম মাংস উৎপাদন করতে পারে, যা দেশের সিংহভাগ মাংসের চাহিদা পূরণে সহায়ক। তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক ব্রয়লার মুরগির মাংসে ই. আলভার্টি জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন। যা টেট্রাসাইক্লিন, নালিডিক্সিক অ্যাসিড, অ্যাম্পিসিলিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও জেন্টামাইসিনের মতো বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। এই জীবাণুটি জুনোটিক প্যাথোজেন অর্থাৎ প্রাণী থেকে মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। এটি খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে ‘শিগা টক্সিন’ নিঃসরণ করে। যা ডায়রিয়া, পেটব্যথা, বমি ও জ্বরের মতো অন্ত্রজনিত রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ১৯৯১ সালে দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর দেহে প্রথমবারের মতো এই জীবাণু শনাক্ত করা হয়েছিল। তবে এই প্রথম মুরগির মাংসে এই জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।
গবেষকদের দাবি, খামার পর্যায়ে অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি, গাদাগাদি করে পালন, অস্বাস্থ্যকর উৎপাদন পদ্ধতি এবং অপ্রয়োজনীয় ও অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে মুরগিতে এই জীবাণুর উপস্থিতি দেখা যায়। মুরগির পরিপাকতন্ত্রে এই জীবাণু থাকায় অসুস্থ মুরগির মলের মাধ্যমে অন্য মুরগির সংক্রমিত হয়। মুরগির মাংস জীবাণুর সংক্রামণ ঘটে যখন একই ছুরি দিয়ে পরিপাক অঙ্গ এবং মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এ ছাড়া মুরগির মাংস প্রস্তুতকারী ব্যক্তির হাত ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও সংক্রামণ হয়।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. জায়েদুর রহমান। বর্তমানে তিনি পোস্টডক্টরাল গবেষণার জন্য জাপানে অবস্থান করছেন। গবেষণা প্রবন্ধটি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফুড মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণা প্রবন্ধে দেখা যায়, দেশের চারটি উপজেলার ১৭টি খুচরা দোকান থেকে প্রক্রিয়াজাত মুরগির মাংস থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহকৃত নমুনার মধ্যে ছিল মুরগির ক্লোয়াকা, প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এবং কর্মীদের হাতের সোয়াব। এরপর পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, ই. আলভার্টি মুরগির মাংসে ৬৩.৯ শতাংশ, ক্লোয়াকায় ৭১.৪ শতাংশ এবং মানব হাতের সোয়াবে ৪৫.৫ শতাংশ উপস্থিত ছিল।
অধ্যাপক জায়েদুর রহমান জানান, এই জীবাণুতে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। খুচরা দোকানসমূহে স্বাস্থ্যবিধি, জীব নিরাপত্তা এবং ভালোভাবে মাংস প্রক্রিয়াজাত ও সিদ্ধ করলেই সংক্রামণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে এই গবেষণায় নমুনার সংখ্যা কম থাকায় কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পুরো দেশে মুরগির মাংসে এই জীবাণুর উপস্থিত আছে কিনা তা বলাও মুশকিল। নিরাপদ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রশিক্ষণ এবং নিয়মিত রোগজীবাণু নজরদারি খাদ্যবাহিত সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।


