র্যাবিস বা জলাতঙ্ক একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা র্যাবডোভিরিডি পরিবারের লিসাভাইরাস গণের র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। এটি দেহের প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সংক্রমিত করে। এর ফলে অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি, মাথাব্যথা ও জ্বরসহ নানা ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ।
র্যাবিস সাধারণত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর ও বাদুরের কামড়ে হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে অধিকাংশ আক্রান্তের ঘটনা কুকুর ও বিড়ালের কামড় মাধ্যমে ঘটে। তবে এই রোগটি শুধুমাত্র কামড়ের মাধ্যমেই হতে পারে এমনটি নয়, এটি আরও কয়েকটি উপায়ে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, র্যাবিস একটি এমন রোগ, যা শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য হলেও, একবার লক্ষণ প্রকাশ পেলে এটি শতভাগ মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে। কামড় ছাড়াও বিভিন্নভাবে এই ভাইরাস একজন সুস্থ মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। জলাতঙ্ক ছড়ানোর কয়েকটি কারণের কথা জানিয়েছেন তিনি।
১. ক্ষতস্থান দিয়ে জীবাণু প্রবেশ: র্যাবিস ভাইরাস সাধারণত সংক্রামিত প্রাণীর লালায় থাকে। যদি কোনো সুস্থ ব্যক্তির শরীরের খোলা ক্ষত র্যাবিস আক্রান্ত প্রাণীর লালার সংস্পর্শে আসে, তবে সেই ব্যক্তি জলাতঙ্কে আক্রান্ত হতে পারে। লালা থেকে জীবাণুটি প্রান্তীয় স্নায়ু হয়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে। পরবর্তী এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।
২. আচঁড়ের মাধ্যমে: কুকুর বা বিড়ালের নখ বারবার লালার সংস্পর্শে আসার ফলে সেখানে র্যাবিস জীবাণু থেকে যেতে পারে। সংক্রামিত প্রাণী যদি আচঁড় দেয় এবং রক্তক্ষরণ হয়। তাহলে ওই ব্যক্তি এই ভাইরাসে সংক্রমিত করতে পারে।
৩. অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে: র্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তি বা প্রাণীর ফুসফুস, কিডনি এবং চোখ যদি একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়, তবে তার মধ্যেও র্যাবিস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
৪. র্যাবিসে আক্রান্ত প্রাণীর মাংস খেলে: র্যাবিসে আক্রান্ত প্রাণীর মাংস যদি আধা সেদ্ধ বা অপরিপক্বভাবে রান্না করা অবস্থায় খাওয়া হয়, তবে সেই মাংসের মাধ্যমে র্যাবিস ভাইরাস একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করতে পারে। ফলে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
৫. বাতাসের মাধ্যমে: ল্যাবরেটরির মতো বদ্ধ ঘরে যদি র্যাবিস আক্রান্ত প্রাণী নিয়ে গবেষণা করা হয় এবং সেই ঘরে কোনো সুস্থ ব্যক্তি প্রবেশ করেন। তাহলে সেখানে উপস্থিত ভাইরাসযুক্ত কণার মাধ্যমে বাতাস থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। এভাবেও কেউ জলতাঙ্ক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বিরল।
৬. নখ কাটার সময়: কুকুর ও বিড়ালের নখ কাটার সময় যদি নখের খোচার কোন ব্যক্তির রক্ত বের হয়। তাহলে এই রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
অধ্যাপক রফিকুল আলম এই রোগ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানান, ১. র্যাবিসে আক্রান্ত প্রাণী যদি কামড়ায় বা আচঁড় দেয়, তবে ক্ষতস্থান ১৫ মিনিট ধরে সাবান ও পানি দিয়ে ধুতে হবে। ২. এরপর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জলতাঙ্কের টিকা নিতে হবে। ৩. র্যাবিস আক্রান্ত প্রাণী স্পর্শ করার সময় অবশ্যই গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে এবং ক্ষত স্থানের সংস্পর্শ যেন না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ৪. কুকুর ও বিড়ালকে নিয়মিত র্যাবিস ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে।


