Saturday, December 13, 2025
Advertisement
Home কৃষি ক্যাম্পাস নতুন সেচ পদ্ধ‌তি‌ উদ্ভাবন বাকৃবি গবেষকদের

নতুন সেচ পদ্ধ‌তি‌ উদ্ভাবন বাকৃবি গবেষকদের

চা‌লে আর্সেনিক কম‌বে ৪০ শতাংশ

শরীরে ছোপ ছোপ দাগ, বমি বমি ভাব, লাল টকটকে মিউকাস পর্দা এবং তীব্র ডায়রিয়া— এসবই আর্সেনিক বিষক্রিয়ার উপসর্গ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকের বিষ‌ক্রিয়ার প্রভাবে ক্যানসার, কিডনি ও লিভার বিকল হওয়ার ঝুঁকিও র‌য়ে‌ছে। পরিবেশ দূষণের ফলে দেশের ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণের ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে। ধান চাষে পানির ব্যবহার অপরিহার্য হওয়ায়, খাদ্যচক্রের মাধ্যমে চালে আর্সেনিক জমার প্রবণতাও বেশি। তবে স্থানভেদে পানির আর্সেনিক ঘনমাত্রার তারতম্যের কারণে চালে এর পরিমাণেও ভিন্নতা দেখা যায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক চালের আর্সেনিকের মাত্রা কমাতে একটি নতুন সেচ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এই সেচ পদ্ধতিতে ধানের জমি পর্যায়ক্রমে তিনদিন ভেজানো ও চারদিন শুকনো রাখা হয়। সংক্ষেপে একে ৩এফ৪ডি বলা হয়। গ‌বেষণায় দেখা গে‌ছে এতে চালে অজৈব আর্সেনিকের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসে। পাশাপাশি, এই সেচ পদ্ধতিতে সেচের জন্য ব্যবহৃত পানি ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় হয়।

গবেষণা দলের প্রধান ও বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এই গবেষণা‌টি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কারিগরি সহায়তায় ‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান উৎপাদনের জন্য প্রজনন ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হয়।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, গবেষণায় টানা তিনটি বোরো মৌসুমে ৩এফ৪ডি, ৩এফ৭ডি, মধ্য-মৌসুমি নিষ্কাশন এবং নিষ্কাশনবিহীন পদ্ধতিতে আর্সেনিকের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। এ ছাড়া এই পদ্ধতিগুলোর ফল তুলনা করা হয় প্রচলিত অবিরাম জলাবদ্ধতা এবং বিকল্প জলাবদ্ধ ও নিষ্কাশন (এড‌ব্লিও‌বি) পদ্ধতির সঙ্গে।

তিনি বলেন, গবেষণার ফলে দেখা গেছে, ৩এফ৪ডি পদ্ধতিতে চারদিনের নিষ্কাশনের সময় মাটির আর্দ্রতা প্রায় ৫ শতাংশ কমে যায় এবং রিডক্স পোটেনশিয়াল (বৈদ‌্যুতিক প‌রিমাপ) বেড়ে ১৫০–৫০০ মিলিভোল্ট পর্যন্ত পৌঁছে। এতে একটি অক্সিডেটিভ (অক্সিজেনসমৃদ্ধ) পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যার ফলে ধান গাছের আর্সেনিক শোষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ৩এফ৪ডি পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এই পদ্ধতিতে ফলন হ্রাস না করেই নিরাপদ চাল উৎপাদন করা যায়। পাশাপাশি, সেচের পানির ব্যবহার অনেকাংশে কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ প্রবণ এলাকায় জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও টেকসই ধান উৎপাদনের জন্য এটি একটি বাস্তবভিত্তিক সমাধান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বশেষ

কমলা চাষ করে সফল মাদারীপুরের রাসেল

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মৃধাকান্দি এলাকায় কমলা চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল হোসেন।দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে বাবার...

পুরোনা আলু সংরক্ষণ করার অনুরোধ কৃষি উপদেষ্টার

আলুচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোনো আলু সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো....

দেশে ব্রুসেলা জীবাণুর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

দেশে গবাদিপশুর অন্যতম পরিচিত রোগ হলো ব্রুসেলোসিস। ব্রু‌সেলা অ‌্যা‌বর্টাস (Brucella abortus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। এই জীবাণুতে গবাদিপশু আক্রান্ত হ‌লে...

ইউটিউব দেখে ‘কালো ধান’ চাষে সাফল্য

ব্ল‍্যাক রাইস বা কালো ধান। কেউ বলেন ‘প্রিন্স অফ রাইস’। এ ধানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার...