Saturday, December 13, 2025
Advertisement
Home প্রাণিসম্পদ লা‌ম্পি রো‌গ: প্রতি‌রোধ ও চি‌কিৎসা

লা‌ম্পি রো‌গ: প্রতি‌রোধ ও চি‌কিৎসা

বর্তমানে দেশে গবাদিপশুর সবচেয়ে পরিচিত রোগ হলো লা‌ম্পি স্কিন ডিজিজ, যা সংক্ষেপে লা‌ম্পি রোগ নামে পরিচিত। লাম্পি রোগ পক্সভিরিডি পরিবারের ক‌্যাপ্রিপক্সভাইরাস গণের লা‌ম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। ডাবল-স্ট্র্যান্ডেড ডিএনএ বিশিষ্ট এই ভাইরাস নিথলিং ভাইরাস না‌মেও পরিচিত। এই রোগটির সাথে ছাগল ও ভেড়ার বসন্ত ভাইরাসের অনেক মিল রয়েছে।

সর্বপ্রথম লাম্পি রোগ ১৯২৯ সালে আফ্রিকার জাম্বিয়াতে শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এবং পরে তা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের কারণে প্রাণীর চামড়ায় ক্ষত সৃষ্টি হয়, ফলে চামড়ার মূল্য কমে যায়। পাশাপাশি দুধ উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। মৃত্যুহার সাধারণত ১০-১৫ শতাংশ, তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ত গবা‌দিপশুর ক্ষেত্রে মৃত্যুহার বেশি দেখা যায়।

এই রোগ‌টি সর্ম্পকে বিস্তা‌রিত তথ‌্য জা‌নি‌য়ে‌ছেন বাংলা‌দেশ কৃ‌ষি বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের (বাকৃবি) মে‌ডি‌সিন বিভা‌গের অধ‌্যাপক ড. মো. আমিমুল এহসান।

লাম্পি ছড়ানোর মাধ্যম:

১. মশা, মাছি এবং আঠালীর মাধ্যমে সহজে এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে ছড়ায়।
২. আক্রান্ত প্রাণীকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে গেলে।
৩. সুস্থ প্রাণীর যদি আক্রান্ত প্রাণীর লালা, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি বা উপকরণের সংস্পর্শে আসে, তাহলেও রোগ ছড়াতে পারে।

রোগের লক্ষণ:

১. দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (১০৪–১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট), শরীরে ব্যথা থাকে এবং খাবারের প্রতি অনীহা দেখা যায়।
২. শরীরে গোলাকার গুটি দেখা যায় এবং লিম্ফ নোডগুলো ফুলে যায় ।
৩. শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রে নোডিউল লক্ষ করা যায়।
৪. নাক ও চোখ দিয়ে মিউকোপিউরুলেন্ট বা পিচ্ছিল তরল নির্গত হয়।
৫. নোডিউলগুলো বড় হয়ে ফেটে যায় এবং সেখান থেকে পুঁজ বের হয়।

লাম্পি রোগের চিকিৎসা:

১. বাজারে লাম্পি রোগের নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন সহজলভ্য না থাকায় গোট পক্স ভ্যাকসিন ২–৩ গুণ ডোজ দিয়ে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
২. ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিপাইরেটিক এবং অ্যানালজেসিক গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
৩. নোডিউল ফেটে গেলে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়।
৪. য‌দি শ্বাসতন্ত্রে জটিলতা দেখা দিলে ব্রঙ্কোডায়লেটর ব্যবহার করা হয়।
৫. প্রথমবার এই রো‌গে আক্রা‌ন্ত হওয়ার পর সুস্থ হ‌লে তার শরীর থেকে ১০ মি.লি. রক্ত অসুস্থ গরুকে ৭‌ দিন পরপর মাং‌সে দিলেও এই রোগ থে‌কে প্রতিকার পাওয়া যায়।

প্রতিরোধের উপায়:

১. খামারে সঠিক জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার কর‌তে হবে।
২. মশা-মাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৩. আক্রান্ত প্রাণীকে আলাদা করে মশারির ভেতরে রাখতে হবে যেন অন্যরা সংক্রমিত না হয়।
৪. ক্ষতস্থান দিনে দুবার চিংচার আয়োডিন, পভিসেপ বা ০.১% পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে।
৫. নিয়মিত গবাদিপশুর ভ্যাকসিনেশন নিশ্চিত করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বশেষ

কমলা চাষ করে সফল মাদারীপুরের রাসেল

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মৃধাকান্দি এলাকায় কমলা চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল হোসেন।দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে বাবার...

পুরোনা আলু সংরক্ষণ করার অনুরোধ কৃষি উপদেষ্টার

আলুচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোনো আলু সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো....

দেশে ব্রুসেলা জীবাণুর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

দেশে গবাদিপশুর অন্যতম পরিচিত রোগ হলো ব্রুসেলোসিস। ব্রু‌সেলা অ‌্যা‌বর্টাস (Brucella abortus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। এই জীবাণুতে গবাদিপশু আক্রান্ত হ‌লে...

ইউটিউব দেখে ‘কালো ধান’ চাষে সাফল্য

ব্ল‍্যাক রাইস বা কালো ধান। কেউ বলেন ‘প্রিন্স অফ রাইস’। এ ধানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার...