কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলজুড়ে এবার বাদামের ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। চরজুড়ে যেদিকে চোখ যায় সবুজ পাতার দোল খাচ্ছে বাদামের গাছ। সবুজ আর সবুজে ভরা চরাঞ্চল। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরগুলো যেন সেজেছে নতুন সাজে। অল্প বিনিয়োগে বেশি লাভ হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছিল ৩৬০ হেক্টর জমি। যা অর্জিত হয়েছে ৩৬৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৫ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ শত ৩৮ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ২০৫ হেক্টর বাদাম চাষ বেশি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জান গেছে, উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এ সব ইউনিয়নে তিস্তা নদীতে ভেসে উঠেছে অসংখ্য চর। আর এ চর গুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়। তার মধ্যে বাদামের চাষ অন্যতম। বিভিন্ন চরে একরময় একর জমিতে বাদামের চাষ করা হয়েছে।
তিস্তার চরাঞ্চলের থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ার চরের বাদামচাষি নজরুল ইসলাম বলেন, এবারে প্রায় ৩ একর জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। বাদাম উঠানো পর্যন্ত খরচ হবে প্রায় ২ লাখ টাকা। ৩ একর জমিতে ১০০ মণ বাদামের আশা করছেন। বাজারে বাদাম মণ প্রতি বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা। মোট ৩ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন এ কৃষক। খরচ বাদেও ১ লাখ টাকা আয় হবে বলে জানান তিনি।
বাদামচাষি সাহেব আলী, সোহবার আলী, জামাল উদ্দিনসহ আরও অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বাদাম চাষ অত্যন্ত সহজ যা কম খরচে অনেক লাভ করা যায়। এ ছাড়া তিস্তার চরাঞ্চলগুলোতে পলিমাটি জমে থাকায় বাদাম চাষের জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে। তাই এ সব জমিতে বাদামের ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন বাদাম চাষে ঝুঁকছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
কৃষকেরা জানান, গত বছর দফায় দফায় বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদা পানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
গোড়াই পিয়ার, গুনাইগাছ, টিটমা, নাগরাকুড়া, দড়ি কিশোরপুর, হোকডাঙ্গা, সাদুয়া দামারহাট, রামনিয়াসা, বিরহিম, সন্তোষ অভিরাম, খারিজা লাটশালা, গোড়াই, কদমতলা ও অর্জুন সহ অসংখ্য চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাদাম চাষে চরগুলো যেন নতুন করে সেজেছে। শুধু মাঠের পর মাঠ বাদামের সবুজ ক্ষেত। জেগে ওঠা চরের বালুতেই সবুজ বাদামের ক্ষেতকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। মাঝে মাঝে বাদামের সবুজ পাতা বাতাসে দোল খেয়ে যেনো সবুজ ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। যা দূর থেকে এক দৃষ্টি নন্দন করছে। এসব বাদাম ক্ষেতে ডাল ধরে টান দিলেই মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে থোকায় থোকায় বাদাম। আর কয়েক দিন পর এসব চরে বাদাম তুলে রোদে শুকিয়ে ঘরে নেবেন।
উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জানান, বাদাম চাষ একটি লাভজনক ফসল। গত বছরের তুলনায় এবারে বিভিন্ন চরাঞ্চলে বাদামের চাষ বেশি হয়েছে। অল্প খরচে বেশি লাভ করা যায় বাদাম চাষে। যার কারণে কৃষকেরা বাদাম চাষে বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন। বাদামের ফলন ও বাজারদর ভালো থাকলে বাদাম চাষিরা অনেক লাভবান হবেন।
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সকল ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সব সময়।