Saturday, December 13, 2025
Advertisement
Home আন্তর্জাতিক কৃষি বাণিজ্যিকভাবে রজনীগন্ধা চাষ করে সফল হবেন যেভাবে

বাণিজ্যিকভাবে রজনীগন্ধা চাষ করে সফল হবেন যেভাবে

সাজসজ্জায় ও উপহারে যেসব ফুল ব্যবহৃত হয়, রজনীগন্ধা তার মধ্যে অন্যতম। তাই দিন দিন বাড়ছে রজনীগন্ধা চাষ। বাণিজ্যকভাবে রজনীগন্ধা চাষ করে সফল হতে করণীয় কী, তা জানিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের গবেষক অয়ন প্রামাণিক।

এ কৃষিবিজ্ঞানী জানান, মূলত মার্চ- এপ্রিল মাস কন্দ রোপণের উপযুক্ত হলেও, সারাবছর ব্যাপী চাহিদার জোগান দিতে সারাবছর জুড়ে এ অঞ্চলে (পশ্চিমবঙ্গ) বিভিন্ন প্রজাতির রজনীগন্ধা চাষ হয়। এই বছর অকাল বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন অংশে বিশেষত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট, পাঁশকুড়া এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে এই ফুলের চাষ রোগের কারণে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং চাষিরা প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া রজনীগন্ধার চাষ নানান রোগের কারণে ব্যাহত হয়েছে, উৎপাদিত ফসল রপ্তানিযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।

কাণ্ড পচা ও স্ক্লেরোসিয়াম উইল্ট: স্ক্লেরোসিয়াম রল্ফসি (Sclerotium rolfsii) নামক ছত্রাকের কারণে এই রোগ হয়। পশ্চিমবঙ্গে রজনীগন্ধা চাষের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি রোগ অন্তরায়, তার মধ্যে কাণ্ড পচা অন্যতম। মৃত্তিকাজনিত এই ছত্রাকটির আক্রমণে মাটির তলের কাছাকাছি কান্ডের ও পাতার অংশে সাদা অনুচক্র জালিকার আস্তরণ দেখা যায়। রোগের প্রকোপ বাড়লে আক্রান্ত জায়গাগুলি ফ্যাকাশে সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং পুরো পাতা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সুস্থ গাছের তুলনায় অনেকখানি হালকা রঙের হওয়ায় আক্রান্ত গাছগুলোকে খুব সহজে চিহ্নিত করা যায়। এরপর ধীরে ধীরে আক্রান্ত পাতাগুলি গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে সমগ্র গাছটি দুর্বল হয়ে যায় এবং অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়ে।এই ছত্রাকটিই আবার কিছু সময়ে গাছের শিকড় অংশে আক্রমণ করে।

তখন এই রোগটিকে স্ক্লেরোসিয়াম উইল্ট বলা হয়৷ সেক্ষেত্রে প্রধান উপসর্গ হিসেবে পাতা হলুদ হয়ে প্রথমে ঢলে পড়ে এবং তারপর ঝরে যায়। সংক্রমণের শুরুতে ছত্রাকটি কন্দ এবং কাণ্ডের কলার অংশের মাধ্যমে উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়ে। কন্দ এবং শিকড় উভয় জায়গাতেই পচা অংশ দেখা যায় এবং মাটির কাছাকাছি পচা কান্ডে এবং পত্রবৃন্তে ছত্রাকের গাঢ় আস্তরণ দেখা যায়। এমনকি কিছুক্ষেত্রে পুষ্পদন্ডগুলিও পচে যায়।

প্রতিকার:
১. উপসর্গ ভিন্ন হলেও যেহেতু রোগটি মৃত্তিকাবাহিত তাই রোগের প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মাটি শোধন করে কন্দ রোপণ করা উচিত। এর জন্য গ্রীষ্মকালে প্রথমে মাটি গভীরভাবে চাষ দিয়ে কিছুদিন ভালোভাবে রোদ খাওয়াতে হবে ।
২. মাটির আর্দ্রতার পরিমাণ সুষম রাখতে হবে, সেকারণে পরিমিত সেচ প্রয়োগ করতে হবে।গরমের সময়ে সপ্তাহে দুবার এবং শীতকালে ১২-১৩ দিন অন্তর সেচ দেওয়া সমীচীন
৩. কন্দ রোপণের সময়ে উপযুক্ত দূরত্ব বজায় রেখে (৪৫ x ৩৫ সেমি) রোগের প্রকোপ কমানো যেতে পারে।
৪. জৈব ছত্রাকনাশক যেমন ট্রাইকোডারমা, ব্যাসিলাস সাবটিলিস অথবা সিউডোমোনাস ফ্লুওরেসেন্স ইত্যাদি দ্বারা কন্দশোধন বা মাটিতে জৈবসারের সাথে মিশিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে ছড়িয়ে দিতে হবে।সেক্ষেত্রে জমির মাটি তৈরির সময়।
৫. গ্রাম করে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ও সিউডোমোনাস পাউডার ১ কেজি জৈবসারের সাথে মিশিয়ে ১ বর্গমিটারে প্রয়োগ করা যেতে পারে অথবা ৫০০ গ্রাম হারে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি বা সিউডোমোনাস ১০০ কেজি জৈবসারের সাথে মিশিয়ে ১ বিঘা মূল জমিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।এছাড়া কন্দ রোপনের আগে সেগুলিকে সিউডোমোনাস ফ্লুওরেসেন্স ১০ গ্রাম প্রতি লিটার দ্রবণে কিছুক্ষণ (২০-৩০ মিনিট) শোধন করে রোপণ করলে রোগের সম্ভবনা কমে।
৬. রাসায়নিকের ক্ষেত্রে প্রক্লোরাজ ৫.৭% + টেবুকোনাজল ১.৪% ই এস ৩ মিলি প্রতি ১০ কেজি কন্দ হিসেবে অথবা ম্যানকোজেব ৭৫% ডব্লু পি ৩ গ্রাম অথবা টেবুকোনাজল ৭৫%ডি এস ১ মিলি প্রতি ১ কেজি কন্দ হিসেবে মিশিয়ে কন্দশোধন করা যেতে পারে।

বট্রাইটিস ব্লাইট: এই রোগের কারণ হল বট্রাইটিস ইলিপ্টিকা (Botrytis elliptica) নামক ছত্রাক প্রধানত বর্ষাকালে অতিরিক্ত আর্দ্রতায় এই রোগ দেখা যায়। সাধারনত ফুলেই উপসর্গ সীমিত থাকলেও,অধিক সংক্রমণে পাতা বা কান্ডতেও উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্ত ফুলগুলিতে গাঢ় বাদামি রঙের ছোপ লক্ষ্য করা যায়। পরবর্তীতে গোটা পুষ্পদন্ডটি শুকিয়ে যায়। জমিতে সংক্রমণ শুরু হলে চাষীরা ভীষণভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

প্রতিকার:
১. জমিতে হাওয়া চলাচলের পথ সুগম রাখতে হবে।
২. পুষ্পদণ্ড কিংবা পাতার উপর যাতে জল জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং কোনো গাছে সংক্রমণ শুরু হলে সেটিকে তুলে ফেলতে হবে । ৩. সংক্রমণ অধিক হলে কার্বেনডাজিম ১ গ্রাম অথবা কার্বেনডাজিম ১২% + ম্যানকোজেব ৬৩% ডব্লু পি ২.৫ – ৩ গ্রাম অথবা ক্লোরোথ্যালোনিল ৭৫% ডব্লু পি ১-২ গ্রাম অথবা অ্যাজোক্সিস্ট্রবিন ১৮.২% + ডাইফেনোকোনাজল ১১.৪%এস সি ০.৫-০.৭ মিলি প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে ৭-১৪ দিন অন্তর হিসেবে ৩-৪ বার প্রয়োগ করে রোগের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যেতে পারে।

পাতার আগা পচা বা টিপ ব্লাইট: ফোমা মন্ডৌরিয়েনসিস (Phoma mondouriensis) নামক ছত্রাকের কারণে রোগটি হয় । সাম্প্রতিককালে ২০১৬ সালে নদিয়ার মন্ডোরি থেকে প্রথম রোগটিকে চিহ্নিত করা হয়। এই অঞ্চল ছাড়াও নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি,বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশ কিছু অংশে টিপ ব্লাইটের হদিশ পাওয়া গেছে । প্রথমে আক্রান্ত পাতার একদম অগ্রভাগে বাদামি ছোপ এক বা উভয়প্রান্ত থেকে পরিলক্ষিত হয়। পরে উপযুক্ত আবহাওয়ায় উভয় প্রান্তের ছোপ মিশে গিয়ে বড় আকার ধারণ করে এবং ক্রমশ পাতার অগ্রভাগ থেকে নিচের দিকে অগ্রসর হয়। এই পর্যায়ে আক্রান্ত অংশের রঙ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে ধুসর কিংবা খড়ের মতো হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এভাবে সমগ্র পাতাটি ধীরে ধীরে শুকিয়ে মারা যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বশেষ

কমলা চাষ করে সফল মাদারীপুরের রাসেল

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মৃধাকান্দি এলাকায় কমলা চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল হোসেন।দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে বাবার...

পুরোনা আলু সংরক্ষণ করার অনুরোধ কৃষি উপদেষ্টার

আলুচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোনো আলু সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো....

দেশে ব্রুসেলা জীবাণুর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

দেশে গবাদিপশুর অন্যতম পরিচিত রোগ হলো ব্রুসেলোসিস। ব্রু‌সেলা অ‌্যা‌বর্টাস (Brucella abortus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। এই জীবাণুতে গবাদিপশু আক্রান্ত হ‌লে...

ইউটিউব দেখে ‘কালো ধান’ চাষে সাফল্য

ব্ল‍্যাক রাইস বা কালো ধান। কেউ বলেন ‘প্রিন্স অফ রাইস’। এ ধানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার...