নেত্রকোনার কলমাকান্দায় পাহাড়ের পাদদেশে পতিত জমিতে বালুসহনশীল বাদামসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলার চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের অনেক জমি পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা বালুতে ঢেকে যায়, যা জমির উর্বরতা নষ্ট করে এবং চাষাবাদের অনুপযোগী করে তোলে। এ কারণে আগে কৃষকরা তাদের জমি চাষ না করে ফেলে রাখতেন। এখন তারা পতিত জমিতে বালুসহনশীল ফসল আবাদ করছেন।
কলমাকান্দা উপজেলার চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামে এ বছর ১২ জন কৃষক মোট ২২৪ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষ করেছেন, চারজন কৃষক মোট ৩২ শতাংশ জমিতে ভুট্টা রোপণ করেছেন, ৮৮ শতাংশ জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছেন ছয়জন কৃষক।
এ গ্রামের কৃষকরা জানান, বারসিকের গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা বালি জমিতে ফসল চাষের কৌশল শিখেছেন।
স্থানীয় কৃষক পরিমল রেমা বলেন, ‘আগে আমাদের জমি পতিত থাকত, ফলে কোনো আয় হতো না। এখন আমরা বাদাম, ভুট্টা ও মিষ্টি আলু চাষ করে বাড়তি আয় করছি। আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমি আরও বেশি করে বাদাম ভুট্টা ও মিষ্টি আলু চাষ করেছি। পরীক্ষামূলক ৮ শতাংশ জমিতে প্রথমবারের মতো আখ চাষ করেছি।’
সাবিনা রেমা বলেন, ‘আমার আবাদি জমি বালুতে ঢাকা পড়ে যাওয়ার পর থেকে সে জমিতে কোন ফসল চাষ করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এখন বালু জমিতে বাদাম, ভুট্টা ও মিষ্টি আলু চাষ করছি। ফলনও বেশ ভালোই পাচ্ছি।’
সাদেক মিয়া বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে আমার অনেক জমি বালুতে ঢাকা পড়ে যায়। এক সময় সেসব জমি অনাবাদি রাখতে হতো কিন্তু এখন বালু সহনশীল ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছি।’
সুকুমার হাজং বলেন, ‘এ বছর আমি প্রথমবারের মতো আমার অনাবাদি জমিতে বাদাম চাষ করেছি। বাদাম গাছের ধরন খুবই ভালো। আশা করি ফলনও ভালোই পাব।’
এ উদ্যোগের ফলে পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে, যা কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া, স্থানীয় বাজারে ফসলের সরবরাহ বেড়েছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। নারী কৃষকরাও এ উদ্যোগে অংশ নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রকোনা জেলায় ভুট্টা এবং বাদামের আবাদ কম হয়। আমাদের এখানে দুটি পাহাড়ি উপজেলা আছে একটি দুর্গাপুর, অন্যটি কলমাকান্দা। এখানে পাহাড়ের পাদদেশে অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় পানির সমস্যা হয়, তো সেসব জায়গায় যেখানে পানির সমস্যা হয় সেখানে আমরা ভুট্টা, বাদাম এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি আবাদের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিগত বছরগুলোতে ভুট্টা এবং বাদামে চাষের ক্ষেত্রে কৃষককে কৃষি প্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করেছি। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেরকে এক বিঘা জমিতে চাষাবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছিল। এ বছর আমাদের যে পুনর্বাসন প্রোগ্রামটি দেওয়া হয়েছে সেখানে আসলে যেহেতু আমাদের ভুট্টা এবং বাদাম আবাদ খুবই কম হয়, আমাদের কোন প্রণোদনা’
এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রোগ্রামে এ দুইটি ফসলের আওতায় কোনো সহযোগিতা ছিল না, সে হিসাবে এবছর আমরা কৃষকদের কিছু দিতে পারিনি। তবে আমাদের এখানে কিছু প্রকল্প আছে এ সব প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ভুট্টা এবং বাদামসহ অন্যান্য যেসকল ফসলগুলো এলাকায় আবাদ করলে ভালো হবে এবং এলাকার উপযোগী সে ফসলগুলোর প্রদর্শনী আমরা দিয়ে থাকি এবং প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে প্রকল্প থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ তাদেরকে বিভিন্ন উপকরণ জীবন বীজ, সার এবং বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক প্রয়োজন হয় তাদেরকে আমরা এ প্রকল্প থেকে দিয়ে থাকি।’


