পটুয়াখালীর দশমিনায় এই প্রথম বিষমুক্ত মালচিং পদ্ধতিতে করলা ও শসা চাষ করে সফল হয়েছেন খাদিজা বেগম (২৮) নামের এক নারী কৃষক। পানির প্রয়োজন কম এবং অর্গানিকভাবে কীটনাশক ছাড়াই স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদন হওয়ায় উপজেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে পরিবেশবান্ধব এই চাষ পদ্ধতি।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে উপজেলায় মালচিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ হলেও করলা ও শসা চাষ এটাই প্রথম। এক একর জমিতে এ পদ্ধতিতে করলা ও শসা উৎপাদনের জন্য স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) ও আরএআইএনএস (জঅওঘঝ) প্রকল্পের আওতায় ওই নারী কৃষককে নগদ টাকাসহ বীজ, সার, মালচিং পেপার ও স্প্রে মেশিন সহায়তা দেয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি বিভাগ জানায়, এই পদ্ধতিতে প্রথমে পরিমাণ মতো জমি প্রস্তুত করে সারি তৈরি করা হয়। মাটির সারিগুলো ঢেকে দেওয়া হয় বিশেষ ধরনের পলিথিনে। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির চারা রোপণ করা হয়। রোপণের পর দেখভাল ছাড়া বাড়তি কোনো পরিচর্যার দরকার হয় না। এতে উৎপাদন খরচ যেমন কম, তেমনি কীটনাশকেরও ব্যবহার কম।
স্থানীয়ভাবে জৈব সার ব্যবহার করেই সবজি চাষ করা যায়। সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধব মালচিং ব্যবহার করে দ্বিগুণ ফলন ও বেশি লাভ হওয়ায় এখন উপজেলার অন্যান্য কৃষকরাও এই পদ্ধতিতে করলা ও শসা চাষে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন। বিশেষ করে উপজেলার বেশিরভাগ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নারীরা ভবিষ্যতে এ পদ্ধতিতে করলা ও শসা চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন গাছের মোটা ডাল ও বাঁশের খুঁটি, মোটা নাইলনের জাল ও সুতা দিয়ে মাঁচা তৈরি করা হয়েছে। গবাদি পশু-পাখির আক্রমণ ঠেকাতে চতুর্দিকে দেওয়া হয়েছে নীল নাইলন জালি কাপড়ের বেড়া। উত্তর পাশের পঞ্চাশ শতাংশের মাঁচায় ঝুলে আছে ছোট বড় অসংখ্য করলা এবং দক্ষিণ পাশের মাঁচায় ঝুলে আছে কিছু শসা। তবে শসার ফলন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
খাদিজা উপজেলার দশমিনা সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ-পূর্ব দশমিনা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেনের (৩২) স্ত্রী। কৃষিতে স্বামীর সফলতা দেখে তিনিও উৎসাহিত হন।

তিনি বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় মালচিং পদ্ধতিতে আমি নিজের একর জমির পঞ্চাশ শতাংশে করলা ও পঞ্চাশ শতাংশে শসা চাষ করছি। এতে আমার প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যার মধ্যে কৃষি অফিস থেকে আমাকে বীজ, সার, মালচিং পেপার, স্প্রে মেশিন ও নগদ ৮ হাজার টাকাসহ প্রায় ৪০ হাজার টাকার সহায়তা দেয়। তাতে আমার নিজের খরচ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজি দুইটির গুণাগুণ যেমন ঠিক থাকছে সাথে ফলনও হচ্ছে দ্বিগুণ।’
খাদিজা বেগম বলেন, ‘রোজার বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় শসায় ভালো দাম পেয়েছি। এ যাবত ৭০ থেকে ৮০ মণ শসা ৪০ হাজার টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছি। অপর দিকে গত এক মাসে ৭ মণ করলা পাইকারি বিক্রি করেছি প্রায় ২০ হাজার টাকায়। এখনো করলার দর ভালো পাচ্ছি। আশা করি বাজার দর ভালো থাকলে আগামী এক মাসে আরও ২৫ মণ করলা বিক্রি করতে পারবো প্রায় ৭০ হাজার টাকায়। তাতে নিজ খরচ ২০ হাজার বাদে আমার ১ লাখ টাকার বেশি আয় হবে।’
খাদিজার স্বামী আনোয়ার হোসেন (৩২) বলেন, ‘নিজের কৃষি কাজে সারাদিনের ব্যস্ততার মধ্যেও স্ত্রীর এমন উদ্যোগে খুবই চিন্তিত ছিলাম, কিন্তু স্ত্রীর সঠিকভাবে পরিচর্যা, কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে উৎপাদনে তেমন বেগ পেতে হয়নি।’
দশমিনা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী পরিতোষ বলেন, ‘মালচিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত যে সবজিটি আমি বিক্রি করি অন্য সবজির তুলনায় এটির গুণগত মান অনেক ভালো।’

এই পদ্ধতির চাষাবাদ প্রক্রিয়া বিস্তার লাভ করলে কৃষকেরা বাড়তি লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাফর আহমেদ বলেন, ‘মালচিং পেপার ব্যবহার করে সবজি চাষ প্রযুক্তিটি আমরা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করছি। এটি ব্যবহার করে আমাদের কৃষকরা যেকোনো সবজি, ফল সবগুলোই আবাদ করতে পারবে। অফ সিজনে এই পদ্ধতির ব্যবহার করে করলা উৎপাদন বেশ সহজ হবে।’
তিনি বলেন, ‘সিজনে এবং অফ সিজনে উভয় সময়েই মালচিং পেপার ব্যবহার করে এই সবজি এবং ফল চাষ করতে পারবেন কৃষকরা। সেক্ষেত্রে কৃষকের খরচও অনেক সাশ্রয় হবে। ফলে অনেক লাভবান হবেন তারা।’


