নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ও বৃষ্টি দম্পতি নতুন জাতের ‘লাউ বেগুন’ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। তাদের চাষ করা বেগুন দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাউ, কিন্তু কাছে গেলে ভুল ভাঙবে। জাতটির আসল নাম বারি-১২।
নওগাঁ কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলায় প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে ‘লাউ বেগুন’। এই বেগুনের এক একটির ওজন এক থেকে দেড় কেজি। প্রতিটি গাছে অন্তত ৭ থেকে ৮ কেজি বেগুন ধরেছে। অন্য জাতের বেগুনের চেয়ে এ বেগুনের ফলন ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় বাজারে দামও বেশি। এ বেগুনের রোগ-বালাই কম। সেচও দিতে হয় কম। এর ভর্তা যেমন সুস্বাদু, তেমনি ভাজিসহ ও অন্যান্য তরকারিতে স্বাদও অতুলনীয়। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে এর চারা লাগানো হয় এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে এর ফলন পাওয়া যায়।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে রকিফুল ইসলাম (৩৫)। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আর পড়ালেখা করতে পারেননি। অল্প বয়সেই পারিবারিক প্রয়োজনে সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন। এরপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ শুরু করলেও সফল হতে পারেননি। উপায় না দেখে তিনি ও তার স্ত্রী বৃষ্টি বানু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মৌসুমী’র সদস্য হোন। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)- এর সহায়তায় ২০২৪ সালে ‘মৌসুমী’ থেকে ‘বারি-১২’ জাতের বেগুন চাষের প্রশিক্ষণ নেন।
প্রশিক্ষণ শেষে মৌসুমী থেকে তাদের ৬০০টি বেগুনের চারা দেওয়া হয়। রফিকুল-বৃষ্টি দম্পতি তাদের নিজস্ব ১৫ শতক জমিতে এই ৬০০টি ‘লাউ বেগুনের’ চারা রোপন করেন। এখন সেসব গাছে প্রচুর বেগুন ধরেছে।
রকিফুল ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহে নওগাঁ হাটে দেড় মণ বেগুন নিয়ে গিয়েছিলাম। হাটে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই জানতে চাইছে, এটি লাউ না বেগুন? অন্য বেগুন যেখানে ৫০০ টাকা মণ আর সেখানে আমি ১৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। নিমিষেই শেষ। অন্য বেগুন থেকে এই বেগুনের লাভ ৪ গুণ। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এই বেগুন দেখতে লোকজন আসছে।’
‘মৌসুমি’র কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আরিফ বলেন, পিকেএসএফের আর্থিক সহায়তায় মৌসুমি থেকে রফিকুল দম্পতিকে এসব লাউ বেগুনের চারা দেওয়া হয়েছে। তারা সফল হয়েছে। তাদের উৎপাদন ও বেশ ভালো হয়েছে। যা জেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন এ জাতের বেগুন প্রচলিত অন্যান্য বেগুনের চেয়ে ওজন বেশি হয়। তাই একে কেউ ‘কেজি বেগুন’ আবার কেউবা ‘লাউ বেগুন’ বলে থাকে। এই বেগুন উচ্চ ফলনশীল অর্থকরী ফসল এবং ব্যাক্টেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ সহনশীল।
তিনি বলেন, নতুন জাতের এই বেগুন প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৭ টন হয়। বীজপ্রাপ্তি সহজীকরণ ও উৎপাদন কলাকৌশল, এ জাতের বেগুনের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে পারলে এ জাতের বেগুন দ্রুত মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন।


