Saturday, December 13, 2025
Advertisement
Home উদ্যান কৃষি উত্তরবঙ্গের যে জেলায় চাষ হচ্ছে কফি

উত্তরবঙ্গের যে জেলায় চাষ হচ্ছে কফি

উত্তরবঙ্গের জেলা পঞ্চগড়ে চায়ের পাশাপাশি অর্থকরি ফসল হিসেবে হচ্ছে কফি চাষ। আবাদি জমি দখল করে নয়, ছায়াযুক্ত বাগানে সাথি ফসল হিসেবে কফি চাষ হচ্ছে। বাজারজাত সহজ হলে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২১ সালের শেষের দিকে ‘কফি ও কাজু বাদাম গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ আওতায় জেলার তিন উপজেলায় রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। জেলার মাটি ও আবহাওয়া কফির জন্য উপযোগী হওয়ায় সুপারিসহ বিভিন্ন বাগানের ছায়াযুক্ত ফাঁকা জায়গায় গড়ে উঠছে কফি বাগান।

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিষমুনি গ্রামের চাষি আব্দুল হালিম প্রধান। কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত তিন বছর আগে বাড়ি সংলগ্ন ছায়াযুক্ত সুপারি বাগানে ১৩৫টি কফি চারা রোপণ করেন। তার গাছ থেকে কফি সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার মতো জেলার আরও ৪৭ জন কৃষক কফি চাষ করেছেন। তবে অন্যদের এখনো ফল আসা শুরু হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে একেকটি কফি গাছ। কৃষক আব্দুল হালিম প্রধান পরিচর্যা করছেন কফি গাছ গুলো। অধিকাংশ গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুঁলে আছে লাল-বেগুনি ও সবুজ কফি ফল। পরিপক্ব ফলগুলো উত্তোলন করে ঘরে রাখা হচ্ছে। এ ফলগুলোই প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা যাবে পান যোগ্য কফি।

এ কফিচাষি বলেন, এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক সফলতা না পেলেও সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। বাজারজাত সহজলভ্য না হওয়ায় নেয়া হয়েছে প্রক্রিয়াজাতের উদ্যোগ। কৃষি বিভাগ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য দিয়েছেন একটি মেশিনও।

একই ইউনিয়নের বংশিঝাড় এলাকার কৃষক আবুল বাশারও কফির আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, বাগানের বয়স তিন বছর হলেও এবারই প্রথম ফল এসেছে। যেহেতু ফল বিক্রির কোন সুযোগ নেই, তাই প্রক্রিয়াজাত করার চিন্তা রয়েছে। আর বাজারজাত নিয়ে কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

জানা গেছে, চাষিদের কফি বীজ, কারিগরি সহায়তাসহ নানা পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ। চারা রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যেই ফল আসা শুরু হয় গাছগুলোতে। এটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। প্রতি বিঘা বাগানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কফি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার ৪৭ জন কৃষক ১২ দশমিক ২৬ হেক্টর জমিতে গড়ে তুলেছেন ৭৪টি কফি বাগান।

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বলেন, কফি চাষের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানের প্রয়োজন। যেখানে ছায়া থাকে সেখানেই কফি ভালো হয়। বাড়তি কোনো জমি এবং তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র আগাছানশক স্প্রে এবং ছত্রাকনাশক স্প্রে করায় এ পানীয় চাষে কৃষকের খরচ কম হয়।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুন্নবী বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে চারা, কীটনাশক, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। কফির বাজার ব্যবস্থাপনা ও ফল সংরক্ষণ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। পঞ্চগড়ের আবহাওয়া কফি চাষে অনুকূল হওয়ায় কৃষকেরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন বলে আশা করছেন এ কর্মকর্তা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বশেষ

পুরোনা আলু সংরক্ষণ করার অনুরোধ কৃষি উপদেষ্টার

আলুচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোনো আলু সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো....

দেশে ব্রুসেলা জীবাণুর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

দেশে গবাদিপশুর অন্যতম পরিচিত রোগ হলো ব্রুসেলোসিস। ব্রু‌সেলা অ‌্যা‌বর্টাস (Brucella abortus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। এই জীবাণুতে গবাদিপশু আক্রান্ত হ‌লে...

ইউটিউব দেখে ‘কালো ধান’ চাষে সাফল্য

ব্ল‍্যাক রাইস বা কালো ধান। কেউ বলেন ‘প্রিন্স অফ রাইস’। এ ধানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার...

বেড়েছে প্রাণিসম্পদ, হাঁস-মুরগি ও জলজ চাষে উৎপাদন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রাণিসম্পদ, হাঁস-মুরগি এবং জলজ চাষে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যার ফলে মাছ, দুধ,...