সাতক্ষীরায় মিঠা পানির মাছ থেকেও করা হয় শুঁটকি। দিন দিন সারাদেশে চাহিদা বাড়ছে এ শুঁটকির।
স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, তারা প্রথমে আড়ৎ থেকে মাছ কেনেন। এরপর তা পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে লবণ লাগিয়ে ২৪ ঘণ্টা রেখে দেন। এরপর তা আবার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকাতে দেন। সকালে এভাবে রেখে দুপুরে ও বিকেলে ওই মাছ এপিঠ-ওপিঠ করে উল্টে সন্ধ্যা হলে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন।
তারা জানান, প্রতি বছরই জেলার ত্রিশমাইল ও বিনেরপোতার মাছের আড়ৎগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোট-বড় দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ বিক্রির জন্য আনা হয়। এই মাছের একটি বড় অংশ অবিক্রিত থেকে যায়। এই অবিক্রিত মাছ সংগ্রহ করে তা থেকেই তৈরি হয় শুঁটকি।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, সাতক্ষীরার শুঁটকিতে লবণ ছাড়া অন্য কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। তাই এ জেলার শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কের ত্রিশমাইল ও বিনেরপোতা সড়কের একটু নিচে গেলে দেখা যায়, সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও ছোট পুঁটিসহ বিভিন্ন মাছ কেটে বাঁশের মাচায় শুকাতে দেওয়া রয়েছে।
জেলার তালা উপজেলার ত্রিশমাইল এলাকায় শুঁটকি খামার মালিক রমেশ চন্দ্র খাঁ বলেন, ‘দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমি শুঁটকির আড়ৎ বানিয়েছি। প্রতি মাসে ৪ হাজার কেজির মতো শুঁটকি বানিয়ে থাকি।’
বিনেরপোতায় আরও একটি খামারে স্থানীয়ভাবে কম দামের ছোট তেলাপিয়া দিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে এখানে পর্যাপ্ত উৎপাদন হলেও এখনো স্থানীয় কোনো বাজার সৃষ্টি হয়নি। ফলে বিক্রির জন্য শুঁটকিগুলো জেলার বাইরের মোকামগুলোয় পাঠাতে হয়। এতে লাভের পরিমাণ কমে যায়। তবে এসব শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে আমরা সরবরাহ করে থাকি।’
জেলার সৈয়দপুরের বৃহৎ শুঁটকি আড়তের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রতি মৌসুমে তিনি সাতক্ষীরা জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুঁটকিমাছ সংগ্রহ করেন। এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের লোকজন সিলভার কার্প মাছের শুঁটকি খান। সে কারণে, উত্তরাঞ্চলে এই মাছের শুঁটকির চাহিদা অনেক বেশি। তেলাপিয়া মাছের শুঁটকি কাঁকড়ার খাবার হিসেবে চাহিদা বেশি। প্রতিবেশী দেশগুলোতে পুঁটিমাছের শুঁটকির চাহিদা থাকায় সেখানে এটি রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
জেলা মৎস কর্মকর্তা জি এম সেলিম বলেন, মিঠাপানির শুঁটকি উৎপাদনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় জেলা সাতক্ষীরা। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় বছরে প্রায় এক লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। সাধারণ পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ঘটালে শুটকির গুণনগতমান আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে মেকানিক্যাল ড্রায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। স্থানীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব এই শুটকি ।
তিনি বলেন, ‘এ জেলায় শুঁটকি উৎপাদনের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। শীত মৌসুমে মৎস্য ঘেরে ধান চাষ করার প্রাক্কালে খুব স্বল্প মূল্যে চাষিরা ঘেরের মাছ বিক্রি করে দেন। সে সময় ওই মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে ব্যাপক লাভবান হতে পারেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাই আমরা শুঁটকি উৎপাদন বৃদ্ধি ও এর গুণগত মান উন্নয়নে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছি।’


