Saturday, December 13, 2025
Advertisement
Home উদ্যান কৃষি রিকশাচালক হাসিব এখন মাশরুমচাষি, বছরে আয় ৭-৮ লাখ টাকা

রিকশাচালক হাসিব এখন মাশরুমচাষি, বছরে আয় ৭-৮ লাখ টাকা

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মোহাম্মদ হাসিবের (২৬) ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। তবে বাবার মৃত্যুর পর এসএসসি পাস ধরতে হয় পরিবারের হাল। সংসারের খরচ জোগাতে চালানো শুরু করেন রিকশা।

রিকশা চালালেও সেখানেই আটকে থাকেননি হাসিব। এক বন্ধুর পরামর্শে মাত্র ১ হাজার টাকার মাশরুমের স্পন কিনে শুরু করেন চাষ। প্রথমে সফল হতে না পারলেও আন্তরিক চেষ্টা আর পরিশ্রমের ফলে বর্তমানে তিনি মাশরুম চাষ করেই বছরে ৭-৮ লক্ষ টাকা আয় করছেন।পাশাপাশি অন্যদের মাশরুম চাষের পরামর্শ দিয়ে গড়ে তুলছেন নতুন উদ্যোক্তা।

বন্দর উপজেলায় তিনগাঁও গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হাসান ও শিল্পী বেগম দম্পতির পুত্র মোহাম্মদ হাসিব। দুই ভাইয়ের মধ্যে হাসিব বড়। মোহাম্মদ রিফাত নামে ১৪ বছর বয়সী এক ভাই আছে তার। এ ছাড়া স্ত্রী ও দুই সন্তানও আছে হাসিবের।

হাসিব বলেন, ‘রিকশা চালাতে ভালো লাগত না। ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছা ছিল। ২০২০ সালে আমার এক বন্ধু আমাকে মাশরুম চাষ করার কথা বলে। কিন্তু কিভাবে কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ঘন্টার পর ঘন্টা ইউটিউবে মাশরুম চাষ সংক্রান্ত ভিডিও দেখেছি। স্পন বানানোর বিষয়গুলো ভালো করে বুঝতে পারতাম না। কিছু বিষয় বুঝলেও মনে রাখতে পারতাম না।’

তিনি বলেন, ‘পরে সাভারের মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট থেকে মাশরুমের স্পন কিনে আনি। মানুষের কাছে বিক্রি করার আগে নিজে খাই। খেয়ে ভালো লাগে। পরে প্রতিবেশীকে, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে ফ্রিতেই মাশরুম খেতে দেই। সবাইকে মাশরুমের গুণাগুণ জানাতে থাকি। কিছুদিন পর অল্প অল্প বিক্রি শুরু হয়, কিন্তু ঢাকা থেকে স্পন এনে বিক্রি করে আমার কোনো লাভ থাকত না। পরে সাভার মাশরুম ইন্সটিটিউট থেকে ট্রেনিং নিয়ে নিজেই শুরু করি মাশরুমের স্পন উৎপাদন। প্রথমবার চেষ্টায় আমার সব স্পন নষ্ট হয়ে যায়। পরে কয়েকবার চেষ্টা করে করে এখন আমি নিজেই মাশরুমের স্পন তৈরি করতে পারি।’

হাসিব বলেন, ‘মাশরুমের পাশাপাশি স্পন বিক্রি করছি নিয়মিত। এ ছাড়া মাশরুমের তৈরি খাবার বিক্রিরও পরিকল্পনা রয়েছে।’

তিনি ব্যেলন, মাশরুমের স্পন প্যাকেট থেকে ২৫-৩০ দিনের মধ্যে ফলন আসে। ১ কেজির একটি স্পন প্যাকেট থেকে প্রায় ১ কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। তিনি প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি মাশরুম বিক্রি করেন। প্রতি কেজি কাঁচা মাশরুমে ৮০-৯০ টাকা খরচ করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারেন। এ ছাড়া শুকানো মাশরুম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকেন। ৩২ টাকা খরচে একটি স্পন প্যাকেট ৪০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। মাশরুম চাষ করে বছরে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা উপার্জন করা যায়। হাসিব বলেন, প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা পেলে এ বছর দ্বিগুণ আয় করতে পারব।’

বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, মাশরুম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর উপজেলার দুজন মাশরুম চাষিকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় হাসিবকে মাশরুম চাষে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের চাষঘর তৈরি করে দেওয়াসহ অন্যান্য সহায়তা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) সেলিমা খাতুন বলেন, মাশরুমের পুষ্টি ও ওষুধি গুণ থাকায় সারা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মাঝে মাশরুম চাষে আগ্রহ বাড়ছে। মাশরুম চাষ বেকার সমস্যার সমাধান ও বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বশেষ

কমলা চাষ করে সফল মাদারীপুরের রাসেল

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মৃধাকান্দি এলাকায় কমলা চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাসেল হোসেন।দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে বাবার...

পুরোনা আলু সংরক্ষণ করার অনুরোধ কৃষি উপদেষ্টার

আলুচাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোনো আলু সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো....

দেশে ব্রুসেলা জীবাণুর ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

দেশে গবাদিপশুর অন্যতম পরিচিত রোগ হলো ব্রুসেলোসিস। ব্রু‌সেলা অ‌্যা‌বর্টাস (Brucella abortus) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়। এই জীবাণুতে গবাদিপশু আক্রান্ত হ‌লে...

ইউটিউব দেখে ‘কালো ধান’ চাষে সাফল্য

ব্ল‍্যাক রাইস বা কালো ধান। কেউ বলেন ‘প্রিন্স অফ রাইস’। এ ধানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার...