কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের বারাইপাড়া গ্রামে পানের বরজ করে ভাগ্য বদলে গেছে প্রায় অর্ধ-শতাধিক কৃষক পরিবারের। পান বিক্রির টাকা দিয়ে সচ্ছলভাবে চলছে তাদের সংসার, চলছে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা। বাপ-দাদার পেশা না ছেড়ে আকড়ে ধরে থাকার কারণেই আজ জীবন যুদ্ধে সফলতার মুখ দেখেছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, প্রাচীনকাল থেকে এই গ্রামের বাসিন্দারা পান চাষ করত। এ অঞ্চলের লোকেরা পানের বরজকে বর বলে। আর যারা বর চাষ করে তাদেরকে বলা হয় বারাই। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ পান চাষী হওয়ায় গ্রামটির নাম হয়েছে বারাইপাড়া।
সরেজমিনে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বড়দের পাশাপাশি ছেলে-মেয়েরাও পানের বরজে পান গাছের পরিচর্যা ও পান ছিড়তে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। ওই গ্রামের পান চাষী পরেশ চন্দ্র , ব্রজেন চন্দ্র, প্রফুল্ল চন্দ্র জানান, প্রত্যেকেই প্রায় ১ বিঘা জমিতে পানের বরজ দিয়েছেন। বন্যার সময় কিছুটা ক্ষতি হলেও বর্তমানে বরজের অবস্থা খুবেই ভাল। ফলনও হয়েছে সন্তোষজনক। বর্তমানে তারা পাইকারদের কাছে প্রতি ১’শ পান (বড়) ১৪০ টাকা, মাঝারী প্রতি ১’শ পান ১১০ টাকা এবং ছোট ১’শ পান ৭০ টাকা দরে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার পান বিক্রি করছেন।
তারা আরও জানান, পান চাষে পরিশ্রম হলেও চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় লাভ অনেক বেশি। তাছাড়া সঠিক পরিচর্যা করলে পানের বরজ থেকে সারা বছরই পয়সা আসে। ফলে স্বচ্ছলভাবে সংসার চালানো যায়। একবার বরজ তৈরি করলে ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত পান চাষ করা যায় ।
একই এলাকায় ৪০ শতক জমিতে পানের বরজ দিয়েছেন পরিমল চন্দ্র ও নিতাই চন্দ্র নামে আপন দুই ভাই। তারা বলেন, ‘বাপ-দাদারাও পান চাষ করতেন। তাদের পেশা ধরে রাখতে আমরা দুই ভাই চেষ্টা করছি। আমাদের এ বরজের বয়স ১১ বছর হয়েছে। আশা করছি আরও ৩/৪ বছর থাকবে। বরজের পান বিক্রি করে দুই ভাইয়ের সংসার ভালোই চলছে। আমরাসহ এই গ্রামের প্রায় পঁচিশ- ত্রিশটি পরিবার পানের বরজ দিয়ে স্বচ্ছলভাবে চলছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ জানান, রাবাইটারী ও রামরাম সেন এলাকার ৪০ থেকে ৫০টি কৃষক পরিবার পান চাষ করেছেন। পান চাষ করে ওই পরিবার গুলো স্বাবলম্বী হয়েছে। উপজেলায় চার থেকে পাঁচ হেক্টর জমিতে বরজের মাধ্যমে কৃষকরা পান চাষ করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষে মাঠ পর্যায়ে পান চাষীদের মাঝে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে।


